মোবাইল ফোনের অতি শুল্কে গ্রো করছে গ্রে মার্কেট

বারবার পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ফোনের বাজার বা গ্রে মার্কেট। এটা এখন এতটাই বড় যে, দেশের বেশিরভাগ স্মার্টফোনের বাজার চলে গেছে গ্রে মার্কেটে। এদিকে সরকার বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও আন্দোলনের মুখে পিছু হটতে হয়েছে। কেন তৈরি হচ্ছে গ্রে মার্কেট? আর এতে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় দেশি-বিদেশি উৎপাদক ও বৈধ আমদানিকারকরা? 

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

বৈধভাবে দেশে আসা স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ মোবাইল ফোন এস-২৫ আলট্রার অফিসিয়াল দাম দুই লাখ ৩৬ হাজার টাকা- কোম্পানির নিজস্ব বা অনুমোদিত দোকানে কিনতে গেলে এই টাকাই গুনতে হবে আপনাকে।   

কিন্তু অনুমোদিত বা ডিলার নয়, এমন দোকানে গেলে দাম হয়ে যাবে প্রায় অর্ধেকেরও কম। সেসব জায়গায় এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবাসহ দাম পড়বে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকার মতো। 

একই অবস্থা আইফোনের ক্ষেত্রেও। আনঅফিসিয়াল বা অননুমোদিত দোকানে আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্সের দাম ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশে অনুমোদিত দোকানে এই মডেলের দাম আড়াই লাখ টাকা। 

দামের এই ফারাকই দেশে তৈরি করেছে মোবাইল ফোনের বিশাল এক গ্রে মার্কেট। বেশির ভাগ মানুষের কাছে আনঅফিসিয়াল এই বাজারের ফোন পরিচিত ‘লাগেজ পার্টি ফোন’ হিসেবে। কেউ কেউ বলেন, ‘দুবাই সেট’। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই বাজারে দুটি ভিন্ন দোকানে একই ব্র্যান্ডের মোবাইল সেটের দামের এই আকাশ-পাতাল পার্থক্যের কারণ হলো উচ্চ ‘আমদানি কর’।

প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে স্মার্টফোনের দাম অনেক বেশি। এর ফলে আমদানি বিধিমালা (ব্যাগেজ রুলস) ভেঙে দেশের বাজারে আসছে গ্রে মার্কেটের বেশিরভাগ মোবাইল হ্যান্ড সেট। গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কার্যত কোনো করই দিতে হয় না। কেনা দামের ওপর লাভ নিয়ে বিক্রি করছেন তারা। 

দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও ঝুঁকছেন গ্রে মার্কেটের দিকে। বিদেশি ব্র্যান্ডের সেটগুলো কম দামে বাজারে পাওয়ায় দেশে উৎপাদিত ফোনগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এর আগে ব্যর্থ হলেও এবার শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ক্লোন মোবাইল, চুরি বা ছিনতাই করা এবং রিফারবিশড বা ব্যবহার করা মোবাইল ফোনের আমদানি বন্ধ করতে অবস্থান নিয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। 

১৬ই ডিসেম্বর থেকে চালু হচ্ছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার বা এনইআইআর। এর বিরোধিতায় নেমেছে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা। তারা এনইআইআর-এর সংস্কারসহ মোবাইল ফোনের আমদানি উন্মুক্ত ও সহজ করার দাবি তুলেছেন। 

এসব নিয়ে সরকার-ব্যবসায়ী আলোচনার মধ্যেই রবিবার থেকে মোবাইল ফোন বিক্রি বন্ধ রেখেছে মোবাইল ফোনের খুচরা বিক্রেতাদের সংগঠন- বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি। একইসঙ্গে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ও ঘেরাও করেন ব্যবসায়ীরা। 

২০১৬ সালে, প্রথমবার এনইআইআর চালু করতে গিয়ে এই ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পিছু হটতে হয়েছিল সরকারকে। তখন সারা দেশে বাধ্যতামূলক সিম নিবন্ধন কার্যকর হওয়ার পর হ্যান্ডসেটের নিবন্ধন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের নানারকম চাপের মুখে কোনোটিই বাস্তবায়ন করা যায়নি। 

চলমান আন্দোলন নিয়ে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ২০-৩০ হাজার ব্যবসায়ী বিটিআরসির সামনে অবস্থান নিয়েছে। শিগগিরই কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে বসব আমরা।”

গ্রে মার্কেটের বাজার

১৯৯৩ সালে মোবাইল ফোন সেবা চালু হওয়ার পর- বৈধ বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অবৈধ বাজার। স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে এটা আরও গতিতে বিস্তৃত হয়েছে। 

গ্রে মার্কেট কত বড়- সেই ধারণা পাওয়া যাবে বিটিআরসির সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে। সেখানে উঠে এসেছে, দেশে সচল স্যামসাং ফোনের সংখ্যা দুই কোটি ৩১ লাখ ২৯ হাজার। এরমধ্যে এক কোটি ৪৯ লাখ ২৬ হাজারই অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত।

দেশের চার মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে সচল আইফোনের সংখ্যা ১৯ লাখ ৭৬ হাজার। এরমধ্যে ৯৯ শতাংশই অবৈধ। মানে- ১৯ লাখ ৫৫ হাজারেরই বৈধ আমদানির তালিকায় নেই। 

ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্টরা দেশের মোবাইল মার্কেটের এই বিশাল বাজারের পেছনে মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন কর বৈষম্য, সরকারের দুর্বল নজরদারি এবং বিভিন্ন সিন্ডিকেটকে।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) এর হিসাবে, দেশের মোট মোবাইল ফোন বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশই অবৈধ বা ‘গ্রে’ মার্কেটের নিয়ন্ত্রণে- যেখানে চোরাই, নকল ও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হ্যান্ডসেট বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। 

এই হিসাবে সরকার প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছে এমআইওবি। 

অতিরিক্ত শুল্কের ফাঁদ

গত দেড় দশকে এই গ্রে মার্কেটের চাহিদা বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসাবে কাজ করেছে বৈধ আমদানির ওপর ‘অতিরিক্ত’ শুল্ক বা কর বৃদ্ধি।

বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা মোবাইলফোনের আমদানি শুল্ক প্রায় ৬১ শতাংশ। 

মোবাইলফোন উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের বাজারে একটি ফোন উৎপাদনে ২০ থেকে ২২ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক ও ভ্যাট দিতে হয়। 

পাশের দেশ ভারতে আমদানির ওপর সব মিলে এই করের পরিমাণ ৪০ শতাংশ। এরমধ্যে ১৮ শতাংশ জিএসটি এবং সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি।  

পাকিস্তানে আমদানি কর নির্ধারণ করা হয়েছে মোবাইল হ্যান্ডসেটের দামের ওপর। ৩০ হাজার টাকা দামের জন্য ৫ হাজার টাকা শুল্ক-কর, ৬০ হাজার টাকা দামের জন্য ১০ হাজার এবং এর বেশি দামের ফোনের জন্য ২৫ হাজার টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়।

পাকিস্তানে যেভাবে হয় সেভাবেই হয় আমেরিকাতেও। অর্থাৎ কর কতটা হবে, তা নির্ভর করে ফোনটির মূল্য এবং আমদানির পদ্ধতির ওপর। এই হিসাব করার সময় আমলে নেয়া হয় দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের এবং স্থানীয় কর কাঠামোকে।  

এদিকে বাংলাদেশে আমদানি শুল্কের পাশাপাশি উৎপাদনের শুল্ক-ভ্যাট কমানোরও দাবি তুলেছেন উৎপাদকরা। তা না হলে মোবাইল ফোনখাতে বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন উৎপাদকরা। 

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক বলেন, “সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে, তাহলে শুল্ক ও ভ্যাট কমাতে হবে। তাহলে, সরকার এখন যে রাজস্ব হারাচ্ছে, সে রাজস্বও পাবে তারা।” 

ব্যাগেজ রুলস

বৈধভাবে ৬১ শতাংশ শুল্কে যখন একটি ফোন প্রবেশ করছে ঠিক তখন ব্যাগেজ রুলসের আওতায় ফোন আসছে প্রায় বিনা শুল্কে। কাস্টমস আইন অনুযায়ী, ব্যাগেজ বিধিমালায় একটি ব্র্যান্ড নিউ ফোন আনা যাবে কোনো রকম শুল্ক ছাড়াই।

২০২৫ সালের ‘অপর্যটক যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালা’ অনুযায়ী, একজন যাত্রী শুল্কমুক্তভাবে বছরে একটি নতুন এবং দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন আনতে পারবেন।

এর মানে হলো, নিজের ব্যবহার করা দুটি ফোনের পাশাপাশি আরও একটি ফোন আনা যাবে বিনা শুল্কে। এরপরের নতুন ফোনটির জন্য গুনতে হবে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকার শুল্ক।

নতুন কাস্টমস বিধিমালাটি কার্যকর হয়েছে গত দোসরা জুলাই থেকে। 

এতে বলা হয়েছে, যাত্রীর সঙ্গে আনা নতুন একটি মোবাইল সেটের দাম ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে শুল্ক হবে ৫ হাজার টাকা, ৩০ থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজারের বেশি হলে শুল্ক দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা। 

বিদেশ থেকে নতুন মোবাইল ফোন আনতে হলে যাত্রীকে কাস্টমসে ঘোষণা দিতে হবে। ঘোষণা ছাড়া মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করতে পারবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

আর একটির বেশি নতুন মোবাইল সেট আনলে সাধারণ আমদানির মতো শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে।

ঝুঁকিতে বৈধ শিল্পের বিনিয়োগ

বর্তমানে বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় ৪৭টি কারখানায় মোবাইল ফোন তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে বছরে ফিচার ফোন উৎপাদন সক্ষমতা এক কোটি। আর স্মার্টফোন উৎপাদন হচ্ছে ৯০ লাখের মতো।

এই খাতে আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এছাড়া- মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ, প্যাকেজিং, প্রিন্টিং ও চার্জার-ক্যাবল উৎপাদনে আর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং প্রায় ৬০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। 

এমআইওবি’র হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার অনুমোদিত বিক্রেতা ও ৮০ হাজার কর্মী সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।

উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ এবং পরোক্ষভাবে ৮ লাখ মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

সংগঠনটির সভাপতি জাকারিয়া শহীদ বলেন, “বর্তমানে বাজারে থাকা মোবাইল ফোনের প্রায় ৬০ শতাংশই অবৈধভাবে আমদানি করা। এতে সরকারের বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।

“অথচ উৎপাদন সরঞ্জামের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেলেও আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের দাম এখনো বাড়াইনি।”

অবৈধ ফোন ব্যবসা চলতে থাকলে এই বিশাল বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে বলেও সতর্ক করেছেন।

সরকারের অবস্থান

এদিকে গ্রে মার্কেটের ব্যাপক বিস্তৃতির পেছনে উচ্চ শুল্ক ও ভ্যাটকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে তা কমানোর অনুরোধ করে ৫ই নভেম্বর এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি।

সংস্থাটি বলছে, মোবাইলফোন আমদানিতে বর্তমানের উচ্চ আমদানি শুল্ক কমানো প্রয়োজন। দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা ফোনের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করলে তা এমনভাবে সমন্বয় করতে হবে, যাতে স্থানীয়খাতের স্বার্থ রক্ষা হয়।

চিঠিতে সরকারের রাজস্ব রক্ষা, অবৈধ মোবাইলফোনের অনুপ্রবেশ রোধে এনইআইআর চালু করতে মোবাইলফোন আমদানি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্ক ও ভ্যাট কমানো এবং বাজারে বিদ্যমান অননুমোদিত মোবাইলফোনকে বৈধকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়েছে বিটিআরসি।

বিটিআরসি একাধিক বিষয়ে এনবিআরের কাছে মতামতসহ সিদ্ধান্ত চেয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- স্বল্প ও যৌক্তিক সময় দিয়ে দেশের ভেতরে প্রবেশ করা অননুমোদিত মোবাইলফোন বিটিআরসির ডেটাবেজে সংযুক্ত করা হলে সে বিষয়ে প্রযোজ্য শুল্কায়ন কী হবে, দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা মোবাইলফোনের শুল্ক ও ভ্যাট সামঞ্জস্য করা। 

সংকটে ব্যবসা 

১৬ই ডিসেম্বর এনইআইআর কার্যকর হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে নিবন্ধনবিহীন সব হ্যান্ডসেট। 

বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদুল বারী বলেন, “অনিবন্ধিত ফোনগুলোর জন্য তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। এ সময় ব্যবহারকারীদের এসএমএসের মাধ্যমে সতর্ক করা হবে। এরপরও নিবন্ধন না হলে প্রযুক্তিগতভাবে ওই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে বিটিআরসি।”

তবে অবৈধ ফোনগুলোকে শুল্কের বিনিময়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। এনবিআরকে পাঠানো চিঠিতে বিটিআরসি বলেছে, এনইআইআর কার্যকর হলে এসব ফোনের বড় একটি অংশ অবিক্রীত থেকে যাবে- যা পরে দেশের নেটওয়ার্কে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।

বিটিআরসি এসব ফোনকে ডেটাবেজে যুক্ত করতে পারবে এবং এটা করতে শুল্কায়ন বিষয় কী হবে, তা নিয়ে এনবিআরের মতামত চাওয়া হয়েছে। 

এদিকে এই বিশাল আর্থিক লোকসান থেকে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা চাই এনইআইআর এর বিষয়টি আরও পরে হোক। এটা বাজেটের পর হলে সুবিধা হবে।

এই সময়ের মধ্যে মানুষজনকে এ সম্পর্কে জানানো যাবে। তাছাড়া ব্যাগেজ রুলের শুল্ক এমন ভাবে ঠিক করা হোক যাতে দেশে মোবাইল ফোনের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়।”

প্রথমে গত ৩০এ নভেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধ রাখে ব্যবসায়ীরা। একদিন পরই আন্দোলন তুলে নেন। 

শাহাদাত হোসেন বলেন, “এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে লাখো ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন এই নিয়মের ফলে একটি বিশেষ গোষ্ঠী লাভবান হবে এবং বাড়তি করের চাপে গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইলের দাম বেড়ে যাবে।”

আন্দোলনরত ব্যবসায়িদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- এনইআইআর সংস্কার, সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল এবং মোবাইল ফোন আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করা।

এদিকে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে অবিক্রীত মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

শাহাদাত হোসেন বলেন, “১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে অবিক্রীত মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি করা সম্ভব নয়। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। 

“তাছাড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পূর্ব পরামর্শ ছাড়াই এনইআইআর হঠাৎ বাস্তবায়নের ঘোষণা বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এর ফলে দেশের প্রায় ২৫ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং ২০ লাখের বেশি মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।”

চলমান আন্দোলন নিয়ে এমওআইবি সভাপতি জাকারিয়া শহীদ বলেন, “সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগের (এনইআইআর) বিরুদ্ধে একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে এনইআইআর নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘লাগেজ পার্টি’ নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীই এ ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “এনইআইআর চালু হলে মোবাইল ফোনের দাম বাড়বে না, বরং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।”