বাংলাদেশে পেপ্যাল চালু নিয়ে আলোচনা চলছে অনেক বছর ধরেই। সম্প্রতি এ নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। এবার পেপ্যাল চালুর সম্ভাবনা কতটুকু? এই গেইটওয়েটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতটুকু সুবিধা পাবেন বাংলাদেশের গ্রাহকরা?
মেরাজ মেভিজ
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৯ পিএমআপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম
আন্তর্জাতিক লেনদেন গেইটওয়ে ‘পেপ্যাল’ চালুর বিষয়টি গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যেন এক মরীচিকা। অথচবিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে ১৪ শতাংশই বাংলাদেশি। এ সংখ্যা গত কয়েক বছরে বাড়লেও ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্টদের মধ্যে জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক এই লেনদেন গেইটওয়েটি আজও চালু করা যায়নি বাংলাদেশে।
বিভিন্ন সময়ে সরকার থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেপ্যাল এক হতাশার নাম। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর-এর বক্তব্য এবং পেপ্যালের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরটি ‘পেপ্যাল’ চালু হওয়া নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে।
গভর্নর বলেছেন, “পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ে এগিয়ে গেছে, বাংলাদেশও সেই বাজারে প্রবেশে আগ্রহী। এজন্য আন্তর্জাতিক পেমেন্ট চ্যানেল তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম পেপ্যাল বাংলাদেশে ব্যবসা করতে চায় এবং শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করবে।”
৩রা ডিসেম্বর এক বক্তব্যে পেপ্যাল সম্পর্কে গভর্নর আরও বলেন, “এটি বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা, যেখানে টাকা পাওয়া-পাঠানো, বিল প্রদান ও আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিতে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম সময়ের দাবি।”
এদিকে গভর্নরের এ বক্তব্যের আগেই বাংলাদেশ সফরে এসেছেন পেপ্যালের চারজন প্রতিনিধি। যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কর্মকর্তাও ছিলেন। দলটি ২রা ডিসেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, দেশের ফ্রিল্যান্স কমিউনিটি ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে।
যেখানে বাংলাদেশে পেপ্যাল চালু হওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, “পেপ্যাল প্রতিনিধিদের মনোভাব ছিল বেশ ইতিবাচক। তারা বাংলাদেশের বাজারের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নোট করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে জেনে নিয়েছেন।”
এই সফরে পেপ্যাল প্রতিনিধি দলটির বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিডার চেয়ারম্যান এবং একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এসব নীতিনির্ধারক ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর তারা ফিরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
পেপ্যাল কেন দরকার?
বাংলাদেশে পেওনিয়ার, জুম ও ব্যাংক ট্রান্সফার পদ্ধতি চালু রয়েছে। এরপরও পেপ্যাল কেন চাইছেন ফিল্যান্সাররা?
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফিল্যান্সার সৌমিক দেওয়ান বলেন, “দেশে বিভিন্ন ভাবে টাকা আনা গেলেও আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের কাছে এগুলোর অনেকগুলোই পেপ্যালের মতো গ্রহনযোগ্য নয়। পশ্চিমা দেশগুলোর ক্লায়েন্টের জন্য পেপ্যাল সবচেয়ে সুবিধাজনক পেমেন্ট পদ্ধতি। কেননা, ওই দেশগুলোতে এটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তারা প্রায়শই অন্য পেমেন্ট পদ্ধতির থেকে পেপ্যালকে এগিয়ে রাখে।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করা ফ্রিল্যান্সাররা প্রাথমিকভাবে দুইটি উপায়ে কাজ করেন। প্রথমত, মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে আর দ্বিতীয়ত স্বাধীনভাবে। এক্ষেত্রে কিছু মার্কেটপ্লেস একচেটিয়াভাবে পেপ্যালের উপর নির্ভরশীল। আর অন্যগুলো একাধিক পেমেন্ট পদ্ধতি প্রস্তাব করে। আমরা মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করতে পারি না শুধু পেপ্যালের সুবিধা নেই বলে। তাছাড়া একবার যখন আস্থা তৈরি হয়ে যায়, তখন বহু ফ্রিল্যান্সাররাই তার ক্লায়েন্টের সাথে মার্কেটপ্লেসের বাইরে কাজ শুরু করে। এতে করে প্ল্যাটফর্ম ফি এড়িয়ে যাওয়া যায়। যাতে দুপক্ষই লাভবান হয়। কেননা, প্রতিটি পেমেন্ট থেকে মার্কেটপ্লেস মোটা অঙ্কের টাকা কেটে নেয়। আবার টাকা আনার পর পুরো টাকা ক্যাশ করতে অনেক সময়ই ৭-১০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়।”
“পেপ্যাল চালু হলে ক্লায়েন্টদের থেকে সরাসরি, দ্রুত, এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে (২০% পর্যন্ত কমিশন এড়ানো সম্ভব) পেমেন্ট গ্রহণ করা যাবে। ছোট উদ্যোক্তাদের (SME) স্বল্প পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর এলসি (Letter of Credit) খুলতে হয়। যা একটি জটিল প্রক্রিয়া। পেপ্যাল চালু হলে এই জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের থেকে সহজে পেমেন্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী ছোট চালান বা পরিষেবা রপ্তানি করা সম্ভব হবে,” তিনি আরও যোগ করেন।
পেপ্যাল কতটা জনপ্রিয় ও সহজ
২০২৪ সালে পেপ্যালের মোট পেমেন্ট ভলিউম (TPV) ছিল ১.৬৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এই অ্যাপটির জনপ্রিয়তা বোঝা যায় ২০০টি দেশে এদের কার্যক্রম দেখে। যা ২৫টিরও বেশি মুদ্রায় লেনদেন সমর্থন করে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পেপ্যাল-এর ৪৩.৪ কোটি সক্রিয় অ্যাকাউন্ট ছিল। তাছাড়া প্রতিদিন পেপ্যাল এর মাধ্যমে ৪ কোটির বেশি লেনদেন সম্পন্ন হয়। বিশ্বের ১ কোটি ৬৮ লাখের বেশি ওয়েবসাইট পেপ্যালের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করে।
পেপ্যাল ব্যবহারের জন্য, আপনাকে প্রথমে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড লিঙ্ক করতে হবে। এরপর, আপনি কেনাকাটা বা অর্থ পাঠানোর জন্য পেপ্যাল সুইচ ব্যবহার করতে পারেন এবং অনলাইনে অর্থ গ্রহণ বা পাঠাতে পারেন। পেপ্যাল একটিমাত্র ইমেইল ঠিকানা বা ফোন নম্বর এর মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ করে দিয়েছে। সে ইমেইলই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আইডি। অনলাইনে বা অ্যাপের মাধ্যমে পেপ্যাল দিয়ে টাকা পাঠানো, বলতে গেলে জিমেইল ব্যবহার করে ইমেইল পাঠানোর মতোই সহজ। পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ডের সঙ্গে পেপ্যালকে সংযুক্ত করে নিতে হয়। পরবর্তী সময়ে সে ব্যাংক বা কার্ডের তথ্য বারবার দেওয়া ছাড়াই নিরাপদে করা যায় লেনদেন, পরিশোধ করা যায় পণ্য বা সেবার মূল্য।
বাংলাদেশে কেন চালু করা যাচ্ছে না
২০২৫এর ডিসেম্বরে এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও ২০১৭ সাল থেকেই আলোচনা চলছে। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সেই সময় ফ্রিল্যান্সারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, এটি শিগরিই চালু হবে।
এত সময় চলে যাবার পরও কেন পেপ্যাল চালু করা গেল না, বাধাগুলো কোথায় ছিল এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইপারট্যাগ সলিউশনস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিউল আলম বলেন, “এর আগে একাধিক ঘোষণা সত্ত্বেও আমার মনে হয় না যে, পেপ্যালের সাথে আলোচনার জন্য কোন জোরালো চেষ্টা করা হয়েছে। ঠিকভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। বাংলাদেশে এর গুরুত্বও বোঝানো যায়নি। তা হলে পেপ্যালকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা যেত।”
এবার চালু হলেও কেবল রিসিভ অপশন চালু হবে বলেই মনে করছেন তিনি। বলেন, “পেপ্যাল এর পুরো ফিচার বোধহয় উন্মুক্ত হবে না। যতটুকু শুনেছি এখন শুধু টাকা গ্রহণ করা যাবে। দেশ থেকে পাঠানোর ব্যবস্থা থাকছে না।”
বাংলাদেশে পেপ্যাল চালুর সম্ভাবনা কতটুকু
বাংলাদেশে পেপ্যাল চালু নিয়ে আলোচনা চলছে অনেক বছর ধরেই। সম্প্রতি এ নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। এবার পেপ্যাল চালুর সম্ভাবনা কতটুকু? এই গেইটওয়েটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতটুকু সুবিধা পাবেন বাংলাদেশের গ্রাহকরা?
আন্তর্জাতিক লেনদেন গেইটওয়ে ‘পেপ্যাল’ চালুর বিষয়টি গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যেন এক মরীচিকা। অথচ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে ১৪ শতাংশই বাংলাদেশি। এ সংখ্যা গত কয়েক বছরে বাড়লেও ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্টদের মধ্যে জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক এই লেনদেন গেইটওয়েটি আজও চালু করা যায়নি বাংলাদেশে।
বিভিন্ন সময়ে সরকার থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেপ্যাল এক হতাশার নাম। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর-এর বক্তব্য এবং পেপ্যালের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরটি ‘পেপ্যাল’ চালু হওয়া নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে।
গভর্নর বলেছেন, “পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ে এগিয়ে গেছে, বাংলাদেশও সেই বাজারে প্রবেশে আগ্রহী। এজন্য আন্তর্জাতিক পেমেন্ট চ্যানেল তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম পেপ্যাল বাংলাদেশে ব্যবসা করতে চায় এবং শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করবে।”
৩রা ডিসেম্বর এক বক্তব্যে পেপ্যাল সম্পর্কে গভর্নর আরও বলেন, “এটি বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা, যেখানে টাকা পাওয়া-পাঠানো, বিল প্রদান ও আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিতে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম সময়ের দাবি।”
এদিকে গভর্নরের এ বক্তব্যের আগেই বাংলাদেশ সফরে এসেছেন পেপ্যালের চারজন প্রতিনিধি। যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কর্মকর্তাও ছিলেন। দলটি ২রা ডিসেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, দেশের ফ্রিল্যান্স কমিউনিটি ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে।
যেখানে বাংলাদেশে পেপ্যাল চালু হওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, “পেপ্যাল প্রতিনিধিদের মনোভাব ছিল বেশ ইতিবাচক। তারা বাংলাদেশের বাজারের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নোট করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে জেনে নিয়েছেন।”
এই সফরে পেপ্যাল প্রতিনিধি দলটির বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিডার চেয়ারম্যান এবং একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এসব নীতিনির্ধারক ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর তারা ফিরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
পেপ্যাল কেন দরকার?
বাংলাদেশে পেওনিয়ার, জুম ও ব্যাংক ট্রান্সফার পদ্ধতি চালু রয়েছে। এরপরও পেপ্যাল কেন চাইছেন ফিল্যান্সাররা?
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফিল্যান্সার সৌমিক দেওয়ান বলেন, “দেশে বিভিন্ন ভাবে টাকা আনা গেলেও আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের কাছে এগুলোর অনেকগুলোই পেপ্যালের মতো গ্রহনযোগ্য নয়। পশ্চিমা দেশগুলোর ক্লায়েন্টের জন্য পেপ্যাল সবচেয়ে সুবিধাজনক পেমেন্ট পদ্ধতি। কেননা, ওই দেশগুলোতে এটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তারা প্রায়শই অন্য পেমেন্ট পদ্ধতির থেকে পেপ্যালকে এগিয়ে রাখে।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করা ফ্রিল্যান্সাররা প্রাথমিকভাবে দুইটি উপায়ে কাজ করেন। প্রথমত, মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে আর দ্বিতীয়ত স্বাধীনভাবে। এক্ষেত্রে কিছু মার্কেটপ্লেস একচেটিয়াভাবে পেপ্যালের উপর নির্ভরশীল। আর অন্যগুলো একাধিক পেমেন্ট পদ্ধতি প্রস্তাব করে। আমরা মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করতে পারি না শুধু পেপ্যালের সুবিধা নেই বলে। তাছাড়া একবার যখন আস্থা তৈরি হয়ে যায়, তখন বহু ফ্রিল্যান্সাররাই তার ক্লায়েন্টের সাথে মার্কেটপ্লেসের বাইরে কাজ শুরু করে। এতে করে প্ল্যাটফর্ম ফি এড়িয়ে যাওয়া যায়। যাতে দুপক্ষই লাভবান হয়। কেননা, প্রতিটি পেমেন্ট থেকে মার্কেটপ্লেস মোটা অঙ্কের টাকা কেটে নেয়। আবার টাকা আনার পর পুরো টাকা ক্যাশ করতে অনেক সময়ই ৭-১০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়।”
“পেপ্যাল চালু হলে ক্লায়েন্টদের থেকে সরাসরি, দ্রুত, এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে (২০% পর্যন্ত কমিশন এড়ানো সম্ভব) পেমেন্ট গ্রহণ করা যাবে। ছোট উদ্যোক্তাদের (SME) স্বল্প পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর এলসি (Letter of Credit) খুলতে হয়। যা একটি জটিল প্রক্রিয়া। পেপ্যাল চালু হলে এই জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের থেকে সহজে পেমেন্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী ছোট চালান বা পরিষেবা রপ্তানি করা সম্ভব হবে,” তিনি আরও যোগ করেন।
পেপ্যাল কতটা জনপ্রিয় ও সহজ
২০২৪ সালে পেপ্যালের মোট পেমেন্ট ভলিউম (TPV) ছিল ১.৬৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এই অ্যাপটির জনপ্রিয়তা বোঝা যায় ২০০টি দেশে এদের কার্যক্রম দেখে। যা ২৫টিরও বেশি মুদ্রায় লেনদেন সমর্থন করে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পেপ্যাল-এর ৪৩.৪ কোটি সক্রিয় অ্যাকাউন্ট ছিল। তাছাড়া প্রতিদিন পেপ্যাল এর মাধ্যমে ৪ কোটির বেশি লেনদেন সম্পন্ন হয়। বিশ্বের ১ কোটি ৬৮ লাখের বেশি ওয়েবসাইট পেপ্যালের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করে।
পেপ্যাল ব্যবহারের জন্য, আপনাকে প্রথমে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড লিঙ্ক করতে হবে। এরপর, আপনি কেনাকাটা বা অর্থ পাঠানোর জন্য পেপ্যাল সুইচ ব্যবহার করতে পারেন এবং অনলাইনে অর্থ গ্রহণ বা পাঠাতে পারেন। পেপ্যাল একটিমাত্র ইমেইল ঠিকানা বা ফোন নম্বর এর মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ করে দিয়েছে। সে ইমেইলই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আইডি। অনলাইনে বা অ্যাপের মাধ্যমে পেপ্যাল দিয়ে টাকা পাঠানো, বলতে গেলে জিমেইল ব্যবহার করে ইমেইল পাঠানোর মতোই সহজ। পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ডের সঙ্গে পেপ্যালকে সংযুক্ত করে নিতে হয়। পরবর্তী সময়ে সে ব্যাংক বা কার্ডের তথ্য বারবার দেওয়া ছাড়াই নিরাপদে করা যায় লেনদেন, পরিশোধ করা যায় পণ্য বা সেবার মূল্য।
বাংলাদেশে কেন চালু করা যাচ্ছে না
২০২৫এর ডিসেম্বরে এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও ২০১৭ সাল থেকেই আলোচনা চলছে। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সেই সময় ফ্রিল্যান্সারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, এটি শিগরিই চালু হবে।
এত সময় চলে যাবার পরও কেন পেপ্যাল চালু করা গেল না, বাধাগুলো কোথায় ছিল এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইপারট্যাগ সলিউশনস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিউল আলম বলেন, “এর আগে একাধিক ঘোষণা সত্ত্বেও আমার মনে হয় না যে, পেপ্যালের সাথে আলোচনার জন্য কোন জোরালো চেষ্টা করা হয়েছে। ঠিকভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। বাংলাদেশে এর গুরুত্বও বোঝানো যায়নি। তা হলে পেপ্যালকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা যেত।”
এবার চালু হলেও কেবল রিসিভ অপশন চালু হবে বলেই মনে করছেন তিনি। বলেন, “পেপ্যাল এর পুরো ফিচার বোধহয় উন্মুক্ত হবে না। যতটুকু শুনেছি এখন শুধু টাকা গ্রহণ করা যাবে। দেশ থেকে পাঠানোর ব্যবস্থা থাকছে না।”