বাংলাদেশ হাইকমিশনের ঘটনা নিয়ে ঢাকা-দিল্লি পাল্টাপাল্টি

ঘটনাকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রোপাগান্ডা’ বলে ভারতের করা অভিযোগকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলছে বাংলাদেশ

আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৯ পিএম

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে টানাপোড়েন চলছে তা গেল সপ্তাহে দুইদিনের ব্যবধানে দুই দেশের হাইকমিশনারকে তলবের ঘটনার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট। সেই উত্তেজনায় এবার নতুন মাত্রা পেলো শনিবার রাতে দিল্লিতে বাংলাদেশের মিশনের সামনে ঘটে যাওয়া বিক্ষোভ নিয়ে।

রবিবার এই ঘটনা নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে উদ্ধৃত করে এক বিবৃতিতে দিল্লি, এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর প্রোপাগান্ডা’ চালানো হয়েছে অভিযোগ করে ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়।

এর কয়েক ঘন্টার মাঝেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তা নাকচ করে দিয়ে ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন এই ঘটনা নিয়ে “সঠিক রিপোর্টই এসেছে।”

তার কিছু পরেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়,“নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের আবাসনে ২০এ ডিসেম্বর ২০২৫ অযৌক্তিক ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটাকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রপাগান্ডা’ হিসাবে বলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

শনিবার রাতের ঐ ঘটনার পর দিল্লিতে প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়, তিনটি গাড়িতে করে কিছু লোক এসে ভবনের গেইটে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ হট্টগোল করে।

“বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে কিছু কথাবার্তা বলছে- হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে; হাইকমিশনারকে ধরো। পরে তারা মেইন গেটের সামনে এসে কিছুক্ষণ চিৎকার করে। ওরা চিৎকার করে চলে গেছে- এতটুকুই আমি জানি,” সংবাদমাধ্যমের খবরগুলোতে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়।

হাইকমিশনের সামনের ঘটনা নিয়ে যা বলছে দিল্লি ও ঢাকা 

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, ২০-২৫ জন হাইকমিশনের সামনে জড়ো হয়ে ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দেয় এবং বাংলাদেশে সকল সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি জানায়।

“বিক্ষোভের সময় কোনো অবস্থাতেই হাইকমিশনের সীমানা প্রাচীর ভাঙার চেষ্টা বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়”, বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে।

তবে তা নাকচ করে দিয়ে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “শুধু হিন্দু নাগরিকের হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়ে চলে গেছে তা না, তারা আরও অনেক কিছু বলেছে সেটা আমরা জানি।”

বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে বিক্ষোভকারীরা হুমকি দিয়েছে এমনটা তিনি শুনেছেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন ওই ঘটনার পর হাইকমিশনারের পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

যদিও দিল্লি বলছে সেদিন হাইকমিশনের সামনে “নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়” এমন কোন কিছু হয়নি, ঢাকার ভাষ্য “দুর্বৃত্তদের সুযোগ” করে দেওয়া হয়েছিল।

“হাইকমিশনের সীমানার ঠিক বাইরে দুর্বৃত্তদেরকে কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল, যা কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে। সংগঠিত এই আয়োজন নিয়ে হাইকমিশনকে আগে থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি,” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী সকল বিদেশি মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন। রবিবারের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ঢাকা জানিয়েছে দিল্লির এই প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে তারা অবগত।

নিরাপত্তার কারণে দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশন সীমিত করা হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন,“যদি তেমন পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাহলে আমরা সেটা করব। আমরা এখনও ভরসা রাখছি যে ভারত যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”

হাইকমিশনের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না এবং এটা আরও রিফর্ম করা দরকার, বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

দিল্লি তার বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর তারা ‘নজর রাখছে’ আর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা ঢাকাকে জানানো হয়েছে। এছাড়া দিপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

এর সমালোচনায় ঢাকা বলছে, “একজন বাংলাদেশি নাগরিক যিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের, তার ওপর বিচ্ছিন্ন আক্রমণকে গোটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হিসাবে দেখানোর যে চেষ্টা ভারত সরকার করেছে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি।“

বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক  বিবৃতি আসার আগে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন,“একজন বাংলাদেশি নাগরিক নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন, এর সাথে মাইনোরিটিজের নিরাপত্তাকে এক করে ফেলার কোন মানে হয় না।”