হংকংয়ে জেলবন্দি নাগরিককে চীনের হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবে যুক্তরাজ্য

আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম

হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা দিন দিন কমছে। ২০১৯ সাল থেকে তা ধাপে ধাপে কমাচ্ছে চীন। ওই বছরের গণতন্ত্রকামী আন্দোলনের পর, ২০২০ সালে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাস করে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার।

ওই আইনে একে একে গ্রেফতার হন হংকংয়ের মানবাধিকাকর্মী ও চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না’র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা।

জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার ব্রিটিশ নাগরিক জিমি লাইও আছেন সেই তালিকায়। সোমবার রাষ্ট্রদোহিতাসহ তিনটি অভিযোগে ‘মিডিয়া টাইকুন’ জিমি লাই’কে দোষী সাব্যস্ত  করেছেন  হংকংয়ের একটি আদালত।

২০১৯ সালে হংকংয়ের গণতন্ত্রের আন্দোলনে অন্যতম মুখ ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক জিমি। একই সাথে দেশটির অন্যতম গণমাধ্যম উদ্যোক্তা। যিনি এখন জালিয়াতির মামলায় জেলবন্দি। দোষী সাব্যস্ত হওয়া রাষ্ট্রদোহিতার মামলা আছে রায়ের অপেক্ষায়।

জিমি লাইয়ের ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘অ্যাপল ডেইলি’কে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীদের কণ্ঠ হিসেবে ব্যবহার করতেন। আন্দোলনের সময় এই সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন চীন ও হংকংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার দেশকে আহ্বান জানায়।

কে এই জিমি লাই?

১২ বছর বয়সে ব্রিটিশ অধ্যুষিত হংকংয়ে আসেন লাই। সেখানে গার্মেন্টকর্মী থেকে ক্রমেই হয়ে ওঠেন গার্মেন্টস টাইকুন। ১৯৯৫ সালে তার নজর যায় গণমাধ্যমে। প্রতিষ্ঠা করেন ‘অ্যাপল ডেইলি’। ওই ট্যাবলয়েড হয়ে ওঠে সিপিসি’র অন্যতম সমালোচক।

১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য হংকংয়ের ভূখণ্ড, চীনের কাছে হস্তান্তর করে। শাসনভারও যায় চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। শুরু থেকেই হংকং, চীনের মূল ভূখণ্ডের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করছিল। কারণ তাদের আইন ব্যবস্থা আলাদা। 

২০১৯ সালে চীন সরকার, হংকংয়ের জন্য একটি বিতর্কিত প্রত্যর্পণ আইন পাস করার পর সেখানে তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। যা ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে ওঠে। ২০২০ সালে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনও পাস হয় দেশটিতে।

বিপরীত মতের নেতা ও সমালোচকের গ্রেফতার করতে শুরু করে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে জিমি লাই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তৎকালীণ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেওর সাথে দেখা করেন।

২০২০ সালে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “মি. প্রেসিডেন্ট, একমাত্র আপনিই আমাদের বাঁচাতে পারেন। আমাদেরকে বাঁচালে চীনের আগ্রাসন থামাতে পারবেন। বিশ্বকেও রক্ষা করতে পারবেন।”

জাতীয় নিরাপত্তা আইনে ২০২০ সালেই জিমি লাই গ্রেফতার হন। তবে রায়ের আগেই ২০২২ সালে ভিন্ন এক জালিয়াতির মামলা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০২১ সালে ‘অ্যাপল ডেইলি’ও বন্ধ করে দেয় সরকার।

দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত

জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মামলায় সোমবারের শুনানিতে লাইয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে দেখানো হয় তার মার্কিন রাজনীতিবিদদের সাথে সাক্ষাৎকে। বলা হয়, এগুলো রাষ্ট্রদ্রোহ ও ‘বিদেশি শক্তির সাথে যোগসাজেশের প্রমাণ’।

প্রমাণ হিসাবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়, গণতন্ত্রকামী নেতাদের সাথে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং ২০২০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা মতামত প্রবন্ধ যেখানে তিনি লিখেন, ‘হংকংয়ে নিষ্পেষণ চালানোর জন্য কী কী উপায়ে চীনকে “শায়েস্তা” করা যায়’।

আদালত জিমি লাইকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। বিচারকরা বলেছেন, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে লাই তার জীবনের অনেক বছর ধরেই চীনের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করে আসছে।” লাই’কে ‘ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড’ বলার পাশাপাশি তারা বলেন, “তার একমাত্র উদ্দেশ্য চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির পতন ঘটানো।” 

জিমি লাইয়ের ছেলে সেবাশ্চিয়ান লাই যুক্তরাজ্যের সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে তার বাবার মুক্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে। দেশটির পররাষ্ট্র সচিব ইভেট কুপার সোমবার বলেন রায়টি ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন জাতীয় নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি শি জিনপিংয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন এবং তাকে অনুরোধ করেছেন লাইকে মুক্তি দেয়ার বিষয় চিন্তা করে দেখতে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও সমালোচনা করছে এই রায়ের। রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস-এর মহাপরিচালক থিবাউত ব্রুত্তিন বলেন, “আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ যে হংকংয়ের গণমাধ্যম স্বাধীনতার চিহ্ন জিমি লাইকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।”

কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)-এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক বেহ লিহ ইয়ি বলেন, “জিমি লাইয়ের একমাত্র অপরাধ ছিল একটি সংবাদপত্র চালানো এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করা।”

তবে এসবের তোয়াক্কা করছে না চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। তারা জানিয়েছে, “জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলার মতো অপরাধকে শায়েস্তা করায় চীন সরকার হংকং-কে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।”