ইতিহাস সুবিচার করেনি- শেক্সপিয়ারের স্ত্রী ও ছেলেকে ঘিরে ৪০০ বছরের রহস্য

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ও তার স্ত্রী অ্যাগনেস- তাদের দাম্পত্য জীবন, সন্তান হারানোর গভীর শোক ও ট্রাজেডি- সবকিছু মিলিয়ে এমন একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যা এখন তুমুল আলোচনার বিষয়। 

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী লেখক শেক্সপিয়ার- যার ছেলের নাম ছিল হ্যামনেট। মাত্র ১১ বছর বয়সে অকালমৃত্যু হয় তার। মর্মাহত সেই ঘটনা শেক্সপিয়ারের জীবনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। এরপরই তিনি রচনা করেন, বিশ্বখ্যাত ট্রাজেডি- হ্যামলেট। 

যে চলচ্চিত্র নিয়ে এখন এতো আলোচনা, সেটির নাম- হ্যামনেট। শেক্সপিয়ারের সন্তানের নামে বানানো ওই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন হ্যামনেটের মা অ্যাগনেস। 

সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে গত নভেম্বরে- যেখানে অ্যাগনেসকে নিয়ে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। অস্কারের দৌড়েও রয়েছে সদ্য মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি।

হ্যামনেট নামে ২০২০ সালে একটি উপন্যাস লেখেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের লেখক ম্যাগি ও’ফ্যারেল। সেই ফিকশনের ওপর ভিত্তি করেই বানানো হয়েছে সিনেমাটি; যেখানে দেখানো হয়েছে- অ্যাগনেসের ছিল ভেষজ জ্ঞান এবং ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তাও বুঝতে পারার মত অলৌকিক এক ক্ষমতা। 

কিন্তু অ্যাগনেসের এই ক্ষমতা তার ছেলেকে মহামারীর হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি- যে ছেলের মৃত্যুর কারণেই ‘হয়তো’ শেক্সপিয়ার লিখেছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক হ্যামলেট। তবে এর কোনো কিছুই প্রমাণিত না।

বইয়ে ও সিনেমায় হ্যামনেট অনেকটাই কাল্পনিক চরিত্র- যেখানে খুব সামান্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গভীর অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হয়েছে। 

কিন্তু তাই বলে লেখিকা ম্যাগি ও’ফ্যারেল ও অস্কার-জয়ী নির্মাতা ক্লোয়ি ঝাও ইতিহাস বিকৃত করেছেন বলা যাচ্ছে না।

কারণ, শত শত বছর ধরে ইতিহাসবিদরা শেক্সপিয়ারের অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলেও- অ্যাগনেস, শেক্সপিয়ার বা তাদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে অথবা কালজয়ী নাটক নিয়ে তেমন কিছু পাননি। এমনকি হ্যামলেট ট্রাজেডি যে ছেলের মৃত্যুর কারণেই শেক্সপিয়ার লিখেছিলেন- সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়া যায় না।

শেক্সপিয়ারের পরিবার নিয়ে যেটুকু তথ্য পাওয়া যায়, তার থেকে বেশি রয়েছে প্রশ্ন।

বিভিন্ন নথিপত্র অনুযায়ী, ১৫৮২ সালে ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেন শেক্সপিয়ার। তখন তার স্ত্রী অ্যান হ্যাথওয়ের (অ্যাগনেস) বয়স ছিল ২৬ বছর এবং তখন তিনি ছিলেন গর্ভবতী- প্রথম সন্তান সুজানা।

গর্ভবতী অ্যানকে বিয়ে করতে শেক্সপিয়ার কি বাধ্য হয়েছিলেন? নাকি তারা ভালবাসায় মজেছিলেন? তা নিয়েও ইতিহাসবিদরা কিছু খুঁজে পাননি।

শেক্সপিয়ার এবং অ্যাগনেসের বিয়ের তিন বছর পর তাদের ঘরে আসে যমজ সন্তান- জুডিথ ও হ্যামনেট। তখন হ্যামনেট আর হ্যামলেট - নাম দুইটি ছিল পরস্পর পরিবর্তনযোগ্য।

কিন্তু মাত্র ১১ বছর বয়সে মারা যান শিশু হ্যামনেট। তবে তার মৃত্যু কেন হয়েছিল- তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না, নেই সুনিশ্চিত কোনো তথ্য। তবে সে সময় মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছিল প্লেগ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হ্যামনেটের মৃত্যু হয়েছিল- এমন আশঙ্কা করেন বেশিরভাগ লেখক ও গবেষকরা। 

তবে এটা প্রায় নিশ্চিত যে, ছেলের শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারেননি শেক্সপিয়ার। নাট্যদল নিয়ে প্রায়ই বাড়ি থেকে অনেকদূরে যেতেন তিনি। ছেলের অকালমৃত্যুর সময়ও শেক্সপিয়ার নাটকের দল নিয়ে বাইরে ছিলেন এমন ধারণাই করা হয়।

যাইহোক, ছেলের মৃত্যুর চার বছর পর হ্যামলেট লেখেন শেক্সপিয়ার। তখন থেকেই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, তার অমর এই সৃষ্টি হয়তো ছেলে হ্যামনেটকে নিয়েই। তবে নিশ্চিত হওয়ার মতো তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই।

শেক্সপিয়ারের স্ত্রী অ্যাগনেসকে নিয়েও বেশিকিছু জানা যায় না। তিনি পড়তে বা লিখতে পারতেন কিনা-  তাও জানা নেই কারও।

সিনেমাতে অ্যাগনেসকে দেখানো হয়েছে- দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন একজন নারী হিসেবে। পর্দায় তার চরিত্রে রয়েছেন আইরিশ অভিনেতা জেসি বাকলি, শেক্সপিয়ারের চরিত্রে আরেক আইরিশ অভিনেতা পল ম্যাসকেল।

শেক্সপিয়ার ও তার কালজয়ী সৃষ্টি হ্যামলেটের মতো না, 'হ্যামনেট' সিনেমার গল্প মূলত আবর্তিত হয়েছে অ্যাগনেসকে ঘিরে।

আখ্যান পরিবর্তন 

হ্যামনেট ও তার বাবা-মাকে নিয়ে সঠিক তথ্যের অভাবে কীভাবে হিমশিম খেতে হয়েছে তা নিজেই জানিয়েছেন উপন্যাসের লেখক ও’ফ্যারেল। পরিশিষ্টে লিখেছেন, গল্প সাজাতে গিয়ে গবেষণা করতে হয়েছে ‘খুবই সাবধানতার’ সঙ্গে।

বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “শেক্সপিয়ারের স্ত্রী, যাকে আমরা অ্যান হ্যাথওয়ে বলে চিনি, তাকে ইতিহাস কতটা খারাপভাবে বিবেচনা করেছে, তা দেখে আমি আসলে মূল বিষয় থেকে সরে গিয়েছিলাম।

“তার (অ্যান) বিষয়ে একটাই বয়ান- তিনি অশিক্ষিত এবং শেক্সপিয়ারকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছিলেন। এমনকি অ্যান থেকে দূরে থাকার জন্য শেক্সপিয়ার লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন।”

অ্যাগনেসের প্রতি ইতিহাস সুবিচার করেনি- ও’ফ্যারেলের এই ধারণার সাথে একমত জো এলরিজ কার্নি- যিনি দ্য কলেজ অফ নিউ জার্সির ইংরেজির অধ্যাপক।

তিনি ‘ওমেন টক ব্যাক টু শেক্সপিয়ার: কনটেম্পরারি অ্যাডাপটেশান্স অ্যান্ড অ্যাপ্রোপ্রিয়েশান্স' বইয়েরও লেখক।

কার্নি মনে করছেন, ও'ফ্যারেলের উপন্যাস এবং এর ভিত্তিতে বানানো সিনেমাটি অ্যান সম্পর্কে  শত শত বছর ধরে চলা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ।

“অ্যান নিয়ে প্রচলিত ধারণা হলো- তিনি স্ট্র্যাটফোর্ডের একজন বিরক্তিকর গৃহিনী। যে কিনা শেক্সপিয়ারকে একঘেঁয়ে দাম্পত্য জীবনে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন,” বিবিসিকে বলেন জো এলরিজ কার্নি।

ইতিহাস ঘেঁটে ও’ফ্যারেল দেখেছেন, শেক্সপিয়ারের স্ত্রীর নাম আসলে কী, তা নিশ্চিত হওয়া কঠিন কাজ। অ্যাগনেস নামটি পাওয়া যায় তার কৃষক বাবার উইলে।

এই কারণেই উপন্যাসের জন্য অ্যাগনেস নামই বেছে নিয়েছেন ও’ফ্যারেল। তার মত হলো, যেহেতু বাবার উইলে লেখা হয়েছে, তাহলে ধরেই নেওয়া যায়, ওইটা তার আসল নাম।

অ্যান না অ্যাগনেস? শেক্সপিয়ারের স্ত্রীর আসল নাম কি, তা নিয়েও রয়েছে অস্পষ্টতা।

শেক্সপিয়ার বিষয়ে গবেষক ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ডেভিড স্কট ক্যাস্টান বলেন, প্রায় সব নথিতেই তার নাম অ্যান। শুধু তার বাবার উইলে নাম অ্যাগনেস।

“সম্ভবত জন্মের সময় তার নাম ছিলো অ্যাগনেস, কিন্তু সবাই তাকে ডাকতেন অ্যান নামে”- বিবিসিকে বলেন তিনি।

অ্যাগনেস- একজন আধুনিক নারী

অ্যাগনেস আসলে কে ছিলেন, তা বোঝার জন্য শেক্সপিয়ারের নাটকগুলো অনেকবার ঘেঁটে দেখেছেন লেখক ও’ফ্যারেল।

“আমি যা করেছি তা হলো, সেখানে তাকে (অ্যাগনেস) খুঁজে পেতে বারবার নাটকগুলো ভিন্নভাবে পড়ার চেষ্টা করেছি। আমার সবসময় মনে হয়েছিলো যে, আমি হ্যামলেটের মধ্যে হ্যামনেটকে দেখতে পাই। আমি ভেবেছিলাম, অবশ্যই সে (অ্যাগনেস) এখানে আছে।”

এই বারবার পড়ার মাধ্যমেই অ্যাগনেসের সহজাত জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোতে অসংখ্য ভিন্ন দৃষ্টির ব্যবহার দেখতে পান লেখিকা- যেখানে জুলিয়াস সিজারের ওরাকলের মিল খুজে পেয়েছেন তিনি।

নাটকগুলো থেকে অ্যাগনেসের ভেষজবিদ্যার জ্ঞান সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়- বিশেষ করে 'হ্যামলেট'-এ ওফেলিয়ার সংলাপে। যেখানে ওফেলিয়াকে প্রায় পাগল হিসেবে দেখানো হয়- যিনি অন্যান্য চরিত্রের হাতে ফুল ও পাতা তুলে দিয়ে বলতে থাকে, "রোজমেরি, এটা মনে রাখার জন্য।”

ও'ফ্যারেল বলেন, "আমি পড়েছিলাম যে, সে সময়ে প্রতিটি বাড়িতেই একটি ঔষধি বাগান থাকত। বাড়ির নারীরা- অর্থাৎ কর্ত্রীর দায়িত্ব ছিল, ওষুধ তৈরি সম্পর্কে জানা এবং অসুস্থদের চিকিৎসা দেওয়া। এই ঔষুধ তৈরি সম্পর্কে পুরুষরা তেমন জানতেন না।”

ও'ফ্যারেল মনে করেন, অ্যাগনেসের এসব গুনের কারণে শেক্সপিয়ার হয়তো তার স্ত্রীর উপর নির্ভর করতেন।

অ্যানকে শেক্সপিয়ারের সমান হিসেবে দেখলে, হয়তো একুশ শতকের নারীদের মতোই আধুনিক এক অ্যাগনেসকে কিছুটা দেখতে পাওয়া যায়।

হ্যামনেট সিনেমায় অ্যাগনেস চরিত্রে এমন এক নারীকে দেখানো হয়েছে- যাকে আমরা শেক্সপিয়ারের স্ত্রী হিসেবে এমনভাবে দেখতে চাই, যে নিজ গুণ বা প্রতিভায় অনন্য। তিনি এতটাই প্রভাব বিস্তারকারী যে- শেক্সপিয়ারের মা তাকে বনের ডাইনীকন্যা উল্লেখ করে নিজের ছেলেকে সতর্ক করেছিলেন।

সিনেমায় অ্যাগনেস স্বাধীনচেতা, বুদ্ধিমান এবং শিল্পীসত্তার গুরুত্ব বুঝতে পারা বিদূষী নারী। এমনকি স্বামীকে লন্ডনে কাজ করতে পাঠাতেও আপত্তি করেননি। একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি এরকম একজন নারীর প্রেমেই পড়বে এবং শেক্সপিয়ার প্রথম থেকেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

তবে অ্যান বা অ্যাগনেসকে নিয়ে এই ধারণা শুধু আশাবাদী চিন্তাই নয়।

কার্নির মতে, ও’ফ্যারেলের এমন চিত্রায়ন নিয়ে অনেকেই ভাবতে পারেন, তিনি অ্যানকে একজন আধুনিক নারীবাদী হিসেবে দেখাতে চাচ্ছেন। এই চিত্রায়ন মিলে যায় সে সময়ের নারীদের বাস্তব জীবনের সাথে। কারণ, তখন অনেক নারীই ক্ষুদ্র ব্যবসা করে সফল হয়েছিলেন। যেমন- ভেষজ চিকিৎসা, মদ ও মল্ট তৈরি, বুনন, বাণিজ্যসহ আরও অনেক কিছু।

তবে এটা এখনো নিশ্চিত না যে, শেক্সপিয়ারের স্ত্রী নিরক্ষর ছিলেন কিনা? কিন্তু সিনেমার অ্যাগনেস পড়তে জানে।

যদিও ও’ফ্যারেলের নিজের ধারণা, বাস্তবে অ্যানের হয়তো আসলেই লেখাপড়া ছিলো না। কারণ, সে সময় কোনো সাধারণ মেষপালকের মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর কোনো যুক্তি তিনি পাননি।

হ্যামলেট-হ্যামনেট সংযোগ

হ্যামনেট বই ও সিনেমায় দেখা যায়, লন্ডনের থিয়েটারে কাজ করার সময় পরিবারকে স্ট্র্যাটফোর্ডে রেখে আসতেন শেক্সপিয়ার। এটা প্রায় সবার জানা।

কিন্তু, প্রশ্ন ওঠে তখনই, যখন হ্যামনেটের মৃত্যু নিয়ে কথা আসে। এক্ষেত্রে ও’ফ্যারেলের চিন্তা মিলে যায় একটি প্রবন্ধের লেখক স্টিফেন গ্রিনব্লার্টের সাথে। শেক্সপিয়ার বিশেষজ্ঞ স্টিফেন গ্রিনব্লাট 'দ্য ডেথ অফ হ্যামনেট অ্যান্ড দ্য মেকিং অফ হ্যামলেট'  শীর্ষক প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে।

তারা দুজনই হ্যামলেট নাটকের সঙ্গে হ্যামনেটের সরাসরি মিল খুঁজে পান। সিনেমার চরিত্র  অ্যাগনেস হ্যামলেট নাটক দেখতে লন্ডনে যান। 'হ্যামলেট' চরিত্রের পোশাক ও চুলের রঙ ঠিক তার ছেলে হ্যামনেটের সাথে মিলে যায়- এটা পরিস্কার ফুটে ওঠে অ্যাগনেসের চোখে।

চলচ্চিত্রে হ্যামনেট চরিত্রে অভিনয় করেছেন জ্যাকোবি জুপ, মঞ্চে হ্যামলেট চরিত্র ধারণ করেছিলেন তার ভাই নোয়াহ জুপ। যেহেতু দুই ভাই, তাই তাদের চেহারার মিল অস্বীকার করার কোনো উপায় ছিলো না।

এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ট্রাজেডিটি শেক্সপিয়ারের জন্য কেবল শোকের প্রকাশ ছিল না। 'হ্যামলেটের বাবা'র ভূতের ভূমিকায় অভিনয় করে, তিনি মঞ্চে তার ছেলেকে এমনভাবে বিদায় জানান- যা তিনি আগে করতে পারেননি।

ক্যাস্টান বলেন, “নাটকে হ্যামনেটের কিছু প্রভাব তো অবশ্যই থাকার কথা, আমরা শুধু জানি না ঠিক কী প্রভাব ছিলো।”

নাটকের সাথে হ্যামনেটের মৃত্যুর সংযোগ ঘটাতে চাওয়া হয়তো স্বাভাবিক। ছেলের মৃত্যু শেক্সপিয়ার ও তার পরিবারকে শোকাহত করেছিল।

একচ্ছত্র কারণ না হলেও, হয়তো হ্যামলেট লেখার আংশিক কারণ ছিলো তার ছেলের মৃত্যু। যে কারণে ছেলে মারা যাওয়ার পর কয়েক বছরের মধ্যেই এক পুরোনো নাটকের দিকে ঝুঁকেছিলেন শেক্সপিয়ার। সেই নাটকটি সম্ভবত থমাস কিডের লেখা, সেখানে এক চরিত্র ছিলো ‘হ্যামলেট’, আর ছিল প্রতিশোধ নিতে চাওয়া এক ভূত- যে কাহিনীর উপর ভর করে নিজের ‘হ্যামলেট’ নাটকটি লেখেন শেক্সপিয়ার।

অনেকে বলেন ‘হ্যামলেট’ নাটকে শেক্সপিয়ারের ভূতের চরিত্র বদলে দিয়েছে জীবিত ও মৃতের সংজ্ঞা। কিন্তু নাটকটির উপর সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক আরও অনেক প্রভাব ছিল।

ক্যাস্টান বলেন, "আসল ঘটনা এবং শেক্সপিয়ারের শিল্পের মধ্যে সংযোগগুলো কেবলই জল্পনা, যদিও তা মানুষের মধ্যে বেশ কৌতূহল জাগায়।"

বাস্তবতা হলো- স্ত্রী ও পরিবার সম্পর্কে শেক্সপিয়ার কী ভাবতেন বা অনুভব করতেন, এর কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই- এমনকি এক টুকরো চিঠিও না।

শুধু অজ্ঞাত একটি চিঠির ওপর নতুন গবেষণা হয়েছে- যেখানে শেক্সপিয়ার ও অ্যাগনেসের দাম্পত্য জীবন নিয়ে কিছু ধারণা হয়তো পাওয়া যাচ্ছে।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্টেগল গবেষণা করে বের করেছেন যে, শেক্সপিয়ার একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যেখানে প্রাপকের নাম লেখা ছিল 'মিসেস শেক্সপিয়ার'।

এই মিসেস শেক্সপিয়ারই অ্যান বা আগনেস বলে ধারণা করেন ওই গবেষক।

এর মানে ১৬০০ থেকে ১৬১০ সালের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে থাকতেন অ্যান এবং তিনি যে সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন ছিলেন- ওই চিঠি এমন ধারণার পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করছে।

গবেষক ম্যাথিউ স্টেগল বলছেন, তার এই গবেষণা নিশ্চিত কোনো বিষয় নয়। তবে এমন এক সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়, যা সহজে এড়িয়েও যাওয়া সম্ভব নয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যামনেট চলচ্চিত্রটি দেখার পর শেক্সপিয়ারের সহধর্মীনীর সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারনায় হয়তো  পরিবর্তন আসবে এবং তাকে অ্যাগনেস হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।”

শেক্সপিয়ারের স্ত্রী নিয়ে নতুন নতুন যে তথ্য আসছে, তা সত্যি হলে খুব ভালো হবে বলে মনে করেন লেখক ও’ফ্যারেল।

“কিন্তু হয়তো এটি ক্ষণস্থায়ী কোনো ব্যাপার, ওই চিঠির মতোই নতুন কিছু সামনে আসবে এবং আবারও নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের।"

শেক্সপিয়ার ও তার পরিবার সম্পর্কে এতো জল্পনা ও গবেষণা নিয়ে দুই শব্দে ম্যাগি ও’ফ্যারেল বলেছেন, "কে জানে?"