বধির বিথহোফেন যেভাবে ২০০ বছর মাতিয়ে রেখেছেন পুরো বিশ্ব
বিথহোফেনের সুরের মূর্ছনায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় পরেও বুঁদ হয়ে থাকে কোটি কোটি মানুষ। সেই সুরের ক্যানভাসে সবচেয়ে বড় আঁচড় যখন পড়েছিল, তখন তিনি কানেই শুনতে পেতেন না
আলাপ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫১ পিএমআপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৬ পিএম
২০০ বছর ধরে বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছেন বিথহোফেন
১৮২৪ সালের মে মাসের একদিন; ভিয়েনার ইম্পেরিয়াল অ্যান্ড রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে জড়ো হয়েছেন অস্ট্রিয়ান রাজপরিবারের সদস্যরা, সঙ্গে আছেন অভিজাতবর্গ এবং নগরীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নামকরা লোকজন। কিন্তু কেউ জানেন না কি জাদুর সামনে পড়তে চলেছেন তারা, যেই জাদুর রেশ থেকে যাবে শতকের পর শতক।
কারণ সেই জাদুকরের নাম যে লুডভিগ ফন বিথহোফেন। যার সুরের মূর্ছনায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় পরেও বুঁদ হয়ে থাকে কোটি কোটি মানুষ।
সেই সুরের ক্যানভাসে সবচেয়ে বড় আঁচড় পড়েছিল ৭ই মে, ১৮২৪ সালে। প্রথমবার বাজানো হয় তার ‘নাইনথ সিম্ফোনি’।
সেদিনের আগেও বিথহোফেনকে চিনতো মানুষ। তবে ১২ বছর মঞ্চের বাইরে ছিলেন বিথহোফেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মঞ্চে এলেন। ভিয়েনায় সেদিন যে অর্কেস্ট্রা সাজানো হয়েছে, তখনো পর্যন্ত বিশ্বে সেটাই সবচেয়ে বড়। এরকম কনসার্টও এর আগে বিশ্ব কখনো দেখেনি।
দর্শকদের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ালেন বিথহোফেন এবং বিপুল আবেগে তার সংগীত দলকে পরিচালনা করতে শুরু করলেন। নিজের সংগীত পরিচালনায় তিনি এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন যে, সুর থেমে গেলেও হাত ঘুরিয়েই যাচ্ছিলেন বিথহোফেন।
তাকে থামাতে এক পর্যায়ে তার অর্কেষ্ট্রা দলেরই একজন বাদক এগিয়ে এলেন তার দিকে। বিথহোফেনকে তিনি ঘুরিয়ে দর্শকদের দিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন। তিনি দেখতে পেলেন কিভাবে দর্শকরা তুমুল করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তবে এই করতালির কিছুই বিথহোফেন শুনতে পাচ্ছিলেন না, কারণ অসাধারণ এই ঘটনাটি যেদিন ঘটেছিল, ততদিনে তিনি একেবারেই বধির।
২৫০ বছর আগে জার্মানির বন শহরে জন্ম নেন সঙ্গীতের এই মহারথী। জন্ম তারিখ নিয়ে সংশয় আছে ইতিহাসবিদদের। কেউ বলেন জন্ম ১৬ ডিসেম্বর, তবে রেকর্ড আছে, ১৭৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর খ্রিস্টধর্ম অনুযায়ী তার জন্মের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছিল। অর্থাৎ, এদিন ব্যাপটাইজড হয়েছিলেন তিনি। রেকর্ড অনুযায়ী সেদিনই জন্মদিন ধরা হয় তার।
জার্মান বংশোদ্ভূত হলেও তাকে ভিয়েনার সবচাইতে মহৎ সঙ্গীতস্রষ্টাদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই ভিয়েনা থেকেই উঠে এসেছেন সংগীতের আরেক জাদুকর ওলফগ্যাং আমাডিউস মোজার্ট। বিথহোফেন যখন বেড়ে উঠছেন তখন ইউরোপে চলছে নেপোলিয়ন যুগের যুদ্ধ। পুরো ইউরোপ জুড়ে তখন মারাত্মক রাজনৈতিক অস্থিরতা।
বিথহোফেনের পরিবারও ছিল সংগীতের সঙ্গে যুক্ত, তবে শৈশব সুখের ছিল না। মদ্যপ পিতার কঠোর শাসন আর আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই বেড়ে ওঠে তার। খুব অল্প বয়সেই তার প্রতিভা চোখে পড়ে, আর সেটাই পুঁজি করেই বাবা তাকে ‘আরেক মোজার্ট’ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। কঠোর অনুশীলন, প্রায় নির্দয় শৃঙ্খলার মধ্য দিয়েই সংগীতে তার প্রাথমিক শিক্ষা।
প্রতিবেশীরা বলতেন, প্রায়ই তারা শিশু বিথহোফেনকে কাঁদতে দেখতেন। প্রায় প্রতিদিনই তাকে বেঁধে রাখতেন তার বাবা। কঠোর অনুশীলনের কারণে ঘুমাতেও পারতেন না।
তরুণ বয়সে ভিয়েনায় এসে বিথহোফেনের জীবনে মোড় নেয়। এখানেই তিনি হায়ডনের সংস্পর্শে আসেন এবং দ্রুতই একজন দক্ষ পিয়ানোবাদক ও সুরকার হিসেবে পরিচিতি পান। ভিয়েনার অভিজাত সমাজে তার পিয়ানো পরিবেশনা ছিল বিস্ময়কর। তাৎক্ষণিক সৃষ্টির ক্ষমতা, গভীর আবেগ আর শক্তিশালী অভিব্যক্তি তাকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। ১৭৯০ সালে যখন রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি দ্বিতীয় জোসেফ মারা যান তখন ১৯ বছর বয়সী বিথহোফেন তার সম্মানে সংগীত তৈরি করেন। যা তাকে খ্যাতি ও সম্মান এনে দেয়।
তবে সাফল্যের এই উত্থানের মাঝেই নেমে আসে জীবনের সবচেয়ে নির্মম আঘাত। ত্রিশের কোঠায় পৌঁছাতেই তার শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। একজন সুরকার ও সংগীতশিল্পীর জন্য এটি ছিল অভিশাপের মতো।
হতাশা, একাকিত্ব আর আত্মহননের চিন্তাও তাকে স্পর্শ করেছিল। ভাইদের কাছে লেখা তার চিঠিতে দেখা যায়, সেসময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি। চিঠিটি ‘হেইলিগেনস্টাট টেস্টামেন্ট’ নামে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত।
তবে হাল ছাড়েননি বিথহোফেন। এখানেই তিনি বাকিদের চেয়ে আলাদা। শ্রবণশক্তি প্রায় সম্পূর্ণ হারিয়েও তিনি সৃষ্টি করেছেন ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ও গভীর সংগীতকর্ম। এই সময়েই রচিত হয় তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগুলো। ‘এরোইকা সিম্ফনি’, ‘নাইনথ সিম্ফনি’, লেট পিয়ানো সোনাটা’, এসব রচনায় ধ্রুপদি কাঠামোর ভেতর ঢুকে পড়ে এমন এক আবেগ, এমন এক সুর, যাতে এখনো ভেসে বেড়ায় মানবজাতি।
জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি সৃষ্টি করেন তার সবচেয়ে বড় কাজ, ‘নাইনথ সিম্ফনি’। সম্পূর্ণ বধির অবস্থায় রচিত এই সিম্ফনিতে ফ্রিডরিখ শিলারের কবিতা ‘ওড টু জয়’ ব্যবহার করেন। এই সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সংগীত যেন কেবল বিনোদন নয়, মানবতার ভাষা হয়ে ওঠে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের অধ্যাপক লরা টানব্রিজ। বিথহোফেনের জীবন আর কাজ নিয়ে লিখেছেন ‘বিথহোফেন: আ লাইফ ইন নাইন পিসেস’ বইটি। ২০২০ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভিয়েনার রয়্যাল কোর্টে ‘নাইনথ সিম্ফোনির’ সেই মূহূর্তটি বিথহোফেনের জীবনের গৌরব আর বেদনাকে একসঙ্গে ধরে রেখেছিল।
“কারণ সংগীত স্রষ্টা বধির। আর যা তিনি রচনা করেছেন, সেটিও অস্বাভাবিক রকমের দীর্ঘ এবং জটিল”, তিনি বলেন। তার মতে সুর আর মাত্রার বিবেচনায় “সংগীতকে বৈপ্লবিক ভাবে পালটে দিয়েছিলেন” বিথহোফেন।
সংগীতকে পালটে দেওয়া এই জাদুকর ১৮২৭ সালে মারা যান। তখন তার বয়স ৫৬। মৃত্যুর পর জানা যায়, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন তিনি। ভয়ানক এই অসুস্থতা ও বধিরতা নিয়েও তিনি পৃথিবীকে দিয়ে গেছেন অমর কিছু সৃষ্টি।
বধির বিথহোফেন যেভাবে ২০০ বছর মাতিয়ে রেখেছেন পুরো বিশ্ব
বিথহোফেনের সুরের মূর্ছনায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় পরেও বুঁদ হয়ে থাকে কোটি কোটি মানুষ। সেই সুরের ক্যানভাসে সবচেয়ে বড় আঁচড় যখন পড়েছিল, তখন তিনি কানেই শুনতে পেতেন না
১৮২৪ সালের মে মাসের একদিন; ভিয়েনার ইম্পেরিয়াল অ্যান্ড রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে জড়ো হয়েছেন অস্ট্রিয়ান রাজপরিবারের সদস্যরা, সঙ্গে আছেন অভিজাতবর্গ এবং নগরীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নামকরা লোকজন। কিন্তু কেউ জানেন না কি জাদুর সামনে পড়তে চলেছেন তারা, যেই জাদুর রেশ থেকে যাবে শতকের পর শতক।
কারণ সেই জাদুকরের নাম যে লুডভিগ ফন বিথহোফেন। যার সুরের মূর্ছনায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় পরেও বুঁদ হয়ে থাকে কোটি কোটি মানুষ।
সেই সুরের ক্যানভাসে সবচেয়ে বড় আঁচড় পড়েছিল ৭ই মে, ১৮২৪ সালে। প্রথমবার বাজানো হয় তার ‘নাইনথ সিম্ফোনি’।
সেদিনের আগেও বিথহোফেনকে চিনতো মানুষ। তবে ১২ বছর মঞ্চের বাইরে ছিলেন বিথহোফেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মঞ্চে এলেন। ভিয়েনায় সেদিন যে অর্কেস্ট্রা সাজানো হয়েছে, তখনো পর্যন্ত বিশ্বে সেটাই সবচেয়ে বড়। এরকম কনসার্টও এর আগে বিশ্ব কখনো দেখেনি।
দর্শকদের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ালেন বিথহোফেন এবং বিপুল আবেগে তার সংগীত দলকে পরিচালনা করতে শুরু করলেন। নিজের সংগীত পরিচালনায় তিনি এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন যে, সুর থেমে গেলেও হাত ঘুরিয়েই যাচ্ছিলেন বিথহোফেন।
তাকে থামাতে এক পর্যায়ে তার অর্কেষ্ট্রা দলেরই একজন বাদক এগিয়ে এলেন তার দিকে। বিথহোফেনকে তিনি ঘুরিয়ে দর্শকদের দিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন। তিনি দেখতে পেলেন কিভাবে দর্শকরা তুমুল করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তবে এই করতালির কিছুই বিথহোফেন শুনতে পাচ্ছিলেন না, কারণ অসাধারণ এই ঘটনাটি যেদিন ঘটেছিল, ততদিনে তিনি একেবারেই বধির।
২৫০ বছর আগে জার্মানির বন শহরে জন্ম নেন সঙ্গীতের এই মহারথী। জন্ম তারিখ নিয়ে সংশয় আছে ইতিহাসবিদদের। কেউ বলেন জন্ম ১৬ ডিসেম্বর, তবে রেকর্ড আছে, ১৭৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর খ্রিস্টধর্ম অনুযায়ী তার জন্মের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছিল। অর্থাৎ, এদিন ব্যাপটাইজড হয়েছিলেন তিনি। রেকর্ড অনুযায়ী সেদিনই জন্মদিন ধরা হয় তার।
জার্মান বংশোদ্ভূত হলেও তাকে ভিয়েনার সবচাইতে মহৎ সঙ্গীতস্রষ্টাদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই ভিয়েনা থেকেই উঠে এসেছেন সংগীতের আরেক জাদুকর ওলফগ্যাং আমাডিউস মোজার্ট। বিথহোফেন যখন বেড়ে উঠছেন তখন ইউরোপে চলছে নেপোলিয়ন যুগের যুদ্ধ। পুরো ইউরোপ জুড়ে তখন মারাত্মক রাজনৈতিক অস্থিরতা।
বিথহোফেনের পরিবারও ছিল সংগীতের সঙ্গে যুক্ত, তবে শৈশব সুখের ছিল না। মদ্যপ পিতার কঠোর শাসন আর আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই বেড়ে ওঠে তার। খুব অল্প বয়সেই তার প্রতিভা চোখে পড়ে, আর সেটাই পুঁজি করেই বাবা তাকে ‘আরেক মোজার্ট’ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। কঠোর অনুশীলন, প্রায় নির্দয় শৃঙ্খলার মধ্য দিয়েই সংগীতে তার প্রাথমিক শিক্ষা।
প্রতিবেশীরা বলতেন, প্রায়ই তারা শিশু বিথহোফেনকে কাঁদতে দেখতেন। প্রায় প্রতিদিনই তাকে বেঁধে রাখতেন তার বাবা। কঠোর অনুশীলনের কারণে ঘুমাতেও পারতেন না।
তরুণ বয়সে ভিয়েনায় এসে বিথহোফেনের জীবনে মোড় নেয়। এখানেই তিনি হায়ডনের সংস্পর্শে আসেন এবং দ্রুতই একজন দক্ষ পিয়ানোবাদক ও সুরকার হিসেবে পরিচিতি পান। ভিয়েনার অভিজাত সমাজে তার পিয়ানো পরিবেশনা ছিল বিস্ময়কর। তাৎক্ষণিক সৃষ্টির ক্ষমতা, গভীর আবেগ আর শক্তিশালী অভিব্যক্তি তাকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। ১৭৯০ সালে যখন রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি দ্বিতীয় জোসেফ মারা যান তখন ১৯ বছর বয়সী বিথহোফেন তার সম্মানে সংগীত তৈরি করেন। যা তাকে খ্যাতি ও সম্মান এনে দেয়।
তবে সাফল্যের এই উত্থানের মাঝেই নেমে আসে জীবনের সবচেয়ে নির্মম আঘাত। ত্রিশের কোঠায় পৌঁছাতেই তার শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। একজন সুরকার ও সংগীতশিল্পীর জন্য এটি ছিল অভিশাপের মতো।
হতাশা, একাকিত্ব আর আত্মহননের চিন্তাও তাকে স্পর্শ করেছিল। ভাইদের কাছে লেখা তার চিঠিতে দেখা যায়, সেসময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি। চিঠিটি ‘হেইলিগেনস্টাট টেস্টামেন্ট’ নামে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত।
তবে হাল ছাড়েননি বিথহোফেন। এখানেই তিনি বাকিদের চেয়ে আলাদা। শ্রবণশক্তি প্রায় সম্পূর্ণ হারিয়েও তিনি সৃষ্টি করেছেন ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ও গভীর সংগীতকর্ম। এই সময়েই রচিত হয় তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগুলো। ‘এরোইকা সিম্ফনি’, ‘নাইনথ সিম্ফনি’, লেট পিয়ানো সোনাটা’, এসব রচনায় ধ্রুপদি কাঠামোর ভেতর ঢুকে পড়ে এমন এক আবেগ, এমন এক সুর, যাতে এখনো ভেসে বেড়ায় মানবজাতি।
জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি সৃষ্টি করেন তার সবচেয়ে বড় কাজ, ‘নাইনথ সিম্ফনি’। সম্পূর্ণ বধির অবস্থায় রচিত এই সিম্ফনিতে ফ্রিডরিখ শিলারের কবিতা ‘ওড টু জয়’ ব্যবহার করেন। এই সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সংগীত যেন কেবল বিনোদন নয়, মানবতার ভাষা হয়ে ওঠে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের অধ্যাপক লরা টানব্রিজ। বিথহোফেনের জীবন আর কাজ নিয়ে লিখেছেন ‘বিথহোফেন: আ লাইফ ইন নাইন পিসেস’ বইটি।
২০২০ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভিয়েনার রয়্যাল কোর্টে ‘নাইনথ সিম্ফোনির’ সেই মূহূর্তটি বিথহোফেনের জীবনের গৌরব আর বেদনাকে একসঙ্গে ধরে রেখেছিল।
“কারণ সংগীত স্রষ্টা বধির। আর যা তিনি রচনা করেছেন, সেটিও অস্বাভাবিক রকমের দীর্ঘ এবং জটিল”, তিনি বলেন। তার মতে সুর আর মাত্রার বিবেচনায় “সংগীতকে বৈপ্লবিক ভাবে পালটে দিয়েছিলেন” বিথহোফেন।
সংগীতকে পালটে দেওয়া এই জাদুকর ১৮২৭ সালে মারা যান। তখন তার বয়স ৫৬। মৃত্যুর পর জানা যায়, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন তিনি। ভয়ানক এই অসুস্থতা ও বধিরতা নিয়েও তিনি পৃথিবীকে দিয়ে গেছেন অমর কিছু সৃষ্টি।