ওসমান হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ঢল

“আমার ভাইয়ের রক্তের বদলা নেওয়ার জন্য আমরা জানাজায় দাঁড়িয়েছি। এখানে খুনি একজন নয়, এখানে পুরা একটা খুনি চক্র আছে।”

আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম

সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির জানায় শনিবার দুপুরে ঢাকার সংসদ ভবন এলাকায় লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে। 

দুপুর আড়াইটার জানাজার নামাজের ইমামতি করেন ওসমান হাদির বড় ভাই মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।

জানাজা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি দাবি জানান, হাদির হত্যাকারীদের বিচার যেন “প্রকাশ্যে এই বাংলাদেশে হয়”।

জানাজা শেষে ওসমান হাদির মরদেহ নিয়ে একটি ফ্রিজিং ভ্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে এগিয়ে যায়।

সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সমাধির পাশেই তাকে দাফন করা হয়।

জানাজা শুরুর আগে যারা বক্তব্য দিয়েছেন তারা জনতাকে শান্তিপূর্ণ থাকতে, সহিংসতা পরিহার করতে ও কোনও রকম উস্কানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। 

জানাজায় অংশ নিতে ঢাকার বাইরে থেকে বহু মানুষ কাল রাত থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় এসে জমায়েত হন।

ওসমান হাদির এই জানাজা অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করেছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি।

এতে ড্রোন থেকে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায় মানিক মিয়া এভিউনিয়ের পুরোটাই ছিল জনতায় ঠাসা।

ভর্তি ছিল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার খোলা ময়দানগুলোও। জানাজায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় সব সদস্য।

ছিলেন সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এবং বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও প্লাটফর্মের নেতারাও।

জানাজা শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস বলেন, “যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন ওসমান হাদি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে থাকবেন।”

প্রফেসর ইউনূস বলেন, “প্রিয় ওসমান হাদি, তোমাকে বিদায় দিতে আসিনি, তুমি আমাদের বুকের মুধ্যে আছো”।

“তোমার কাছে ওয়াদা করতে এসেছি তুমি যা বলে গেছো তা যেন আমরা পালন করতে পারি। তোমার কথা স্মরণ রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকবো", বলেন প্রফেসর ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “হাদি তুমি হারিয়ে যাবে না। কেউ কোনদিন তোমাকে ভুলতে পারবে না”।

সেখানে বক্তব্য রাখেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

তিনি বলেন, “আমার ভাইয়ের রক্তের বদলা নেওয়ার জন্য আমরা জানাজায় দাঁড়িয়েছি। এখানে খুনি একজন নয়, এখানে পুরা একটা খুনি চক্র আছে”।

অবিলম্বে খুনী চক্রকে আটক করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে চব্বিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, “চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ’জনতার সামনে দাঁড়িয়ে আপডেট জানাতে হবে। না হলে তাদের পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের জানাজার আগে বক্তব্য রাখেন।

ইনকিলাব মঞ্চের নির্দেশনা ছাড়া আর কারও প্রচারণায় সহিংসতায় লিপ্ত না হওয়া আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের জানাবো কখন কোথায় কী করতে হবে”।

বক্তব্যের পর তিনি স্লোগান দেন “দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা”। এসময় জানাজায় উপস্থিত বহু মানুষকে চোখের জল ফেলতে দেখা যায়।

জানাজার পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে প্রত্যাশা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ওসমান হাদির দাফন সমাপ্ত করতে পারি। তারপর যেন আমরা সুশৃঙ্খল থাকি, কোন উসকানিতে যেন কান না দেই।"

শান্তিপূর্ণভাবে সকল কার্যক্রম পরিচালিত করার আহবান জানিয়ে হবে, বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, "যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদেরকে আমরা সমুচিত জবাব দেব, এটাই হবে হাদির প্রতি জানানো আমাদের সম্মান”।

ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়।

গত বারোই ডিসেম্বর নির্বাচনি গণসংযোগ চালানোর সময় হাদিকে গুলি করে আততায়ীরা। বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যু হয়।

হাদির মৃত্যুতে ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যপক বিক্ষোভ দেখা দেয়।

সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বিক্ষোভকারীরা বলেন, সন্দেহভাজনদের ভারতে পালিয়ে যেতে দেয়া হয়েছে। বিক্ষুবদ্ধদের মধ্যে ভারতবিরোধী অবস্থানও ছিল স্পষ্ট; তাদের অভিযোগ ভারত খুনীকে আশ্রয় দিয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা বৃহস্পতির রাতভর ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা চালায়। ঢাকায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর পত্রিকাটির প্রকাশনা শুক্রবার বন্ধ থাকে। পুড়িয়ে দেয়া হয় ছায়ানট ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়।

চট্টগ্রামে ও খুলনায় ভারতীয় কূটনীতিকদের বাসভবনেও হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় সহিংস বিক্ষোভকারীরা।