কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির ভারত সফরের একটি অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। প্রিয় ফুটবল তারকাকে একনজর দেখার আশায় হাজারো সমর্থক হাজির হলেও, মেসির সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে দর্শকদের একাংশ।
পরে তারা স্টেডিয়ামের আসন ভাঙচুর করে এবং মাঠের দিকে বিভিন্ন সামগ্রী ছুঁড়ে মারে।
ফুটবলভক্তদের ক্ষোভের মুখে অনুষ্ঠানের আয়োজক শতদ্রু দত্তকে আটক করেছে কলকাতা পুলিশ।
কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জায়েদ শামিম জানিয়েছেন, ঘটনার বিষয়ে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হচ্ছে এবং কোন কোন আইনি ধারা প্রযোজ্য হবে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, সল্টলেক এলাকাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের মুখোমুখি করা হবে। তিনি আরও জানান, ঘটনার প্রধান আয়োজককে আগেই আটক করা হয়েছে।
একই সঙ্গে সমর্থকদের ক্ষোভকে অযৌক্তিক বলেও মনে করেননি কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক। জায়েদ শামিম বলেন, দর্শকরা অত্যন্ত বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। কোথায় কী ধরনের ঘাটতি ছিল এবং এর জন্য কারা দায়ী, তা খুঁজে বের করাই এখন মূল লক্ষ্য। পুরো বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হবে।
মেসির ‘গোট (গ্রেটেস্ট অব অল টাইম-এর সংক্ষিপ্তরূপ) ট্যুর’-এর অংশ হিসেবে কলকাতা, হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও দিল্লিতে একাধিক প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কলকাতায় এই সফরের শুরুতে ৭০ ফুট উচ্চতার মেসির একটি মূর্তি উন্মোচন করা হয়। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে মেসি সেখানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
‘মেসিকে দেখতে চেয়ে দেখলাম শুভশ্রীকে’
শনিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে হাজারো ভক্ত ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার রুপি টিকিট কেটে মেসিকে দেখার জন্য অপেক্ষা করেন।
অনেকেই ধারণা করেছিলেন, মেসি একটি সংক্ষিপ্ত প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেবেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি মাঠ ঘিরে কিছুক্ষণ হাঁটেন ও হাত নাড়েন। এই সময়ে তাকে ঘিরে ছিলেন রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও তারকারা। ফলে সাধারণ দর্শকদের কাছে মেসি প্রায় দৃশ্যমানই ছিলেন না।
প্রায় ২০ মিনিট পর নিরাপত্তারক্ষীদের ঘিরে মেসিকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে দর্শকদের একাংশ। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, এরপরই কয়েকজন দর্শক মাঠে ঢুকে ব্যানার ও টেন্ট ভাঙচুর করে; কেউ কেউ প্লাস্টিকের চেয়ার ও পানির বোতল ছুড়ে মারেন।
ক্ষুব্ধ এক সমর্থক কলকাতার এক টেলিভিশনে বলেন, '১২ হাজার টাকা দিয়ে লিওনেল মেসিকে দেখতে চেয়ে দেখলাম শুভশ্রীকে'।
বিচলিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা
ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি এই ঘটনায় “গভীরভাবে বিচলিত ও মর্মাহত”।
তিনি মেসি ও ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন এবং ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। কমিটি দায়িত্ব নির্ধারণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সুপারিশ করবে।
পুলিশ জানিয়েছে, অনুষ্ঠানের “প্রধান আয়োজককে” গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে টিকিটধারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছে, এটি একটি বেসরকারি অনুষ্ঠান, ফেডারেশন এতে জড়িত ছিল না।
এই সফরে মেসির সঙ্গে ছিলেন তার ইন্টার মায়ামি সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ ও আর্জেন্টিনার রদ্রিগো ডি পল। বলিউড তারকা শাহরুখ খানও অনুষ্ঠানের আগে মেসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ফুটবলপ্রেমী শহর কলকাতায় এমন ঘটনা বিরল নয়, ডার্বি ম্যাচে এখানে লাখো দর্শক মাঠে ভিড় জমান। তবু বহু ভক্তের কাছে এই অভিজ্ঞতা ছিল হতাশার।
এক দর্শক বলেন, “১২ হাজার রুপি টিকিট কেটেও মেসির মুখই দেখা গেল না। আমরা ফুটবলারের জন্য এসেছি, রাজনীতিবিদদের জন্য নয়।”
মেসির সফরকে ঘিরে উম্মাদনা
এদিকে মেসির ভারত সফর ঘিরে উন্মাদনা কমেনি।
‘হোলা মেসি’ ফ্যান জোনে দর্শনার্থীরা দেখতে পাচ্ছেন মেসির জীবনঘনিষ্ঠ নানা প্রতিরূপ, তার ট্রফির প্রদর্শনী, মায়ামির বাড়ির আদলে সাজানো সেট এবং সিংহাসনে বসা জীবন-আকারের মেসির মূর্তি।
লিওনেল মেসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এর আগে ২০১১ সালে সল্টলেক স্টেডিয়ামেই ভারতে লিওনেল মেসির মাঠে নামার স্মৃতি রয়েছে।
আর্জেন্টিনার হয়ে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ১–০ গোলের জয়ে তিনি সেখানে খেলেছিলেন।
কলকাতা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী এবং ক্রিকেটপ্রধান এই দেশে শহরটি একটি শক্তিশালী ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠীর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।