ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর ঢাকা পরিণত হয়েছে বিক্ষোভের নগরীতে। বিক্ষোভকারীরা সহিংস। তাদের কণ্ঠে ভারতবিরোধী শ্লোগান।
কয়েক জায়গায় ভাংচুর অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বিশেষ করে কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় বাংলাদেশের দুটি শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এরকম প্রেক্ষাপটে ‘স্যাবোটাজের’ আশঙ্কায় বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতারা।
তিনজন ছাত্রনেতা ও অন্তর্বতীকালীন সরকারের তিনজন সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিক্ষোভকারীদের ‘শান্তিপূর্ণ’ থাকার আহ্বান জানান।
তারা যদিও ভারতবিরোধী বক্তব্য দেন, তবে তারা এমন সংশয়ও প্রকাশ করেন যে এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা অশান্তি সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে পারে।
‘দিল্লি না ঢাকা’
মধ্যরাতে সদ্য পদত্যাগ করা দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম শাহবাগে আসেন আন্দোলনে সংহতি জানানোর জন্য। তাদের সঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও ছিলেন।
বক্তব্য দেবার আগে নাহিদ ইসলাম শ্লোগান ধরেন। তার শ্লোগান ছিলো “দিল্লি না ঢাকা - ঢাকা, ঢাকা”, “আজাদী না গোলামী - আজাদী, আজাদী”।
তিনজন সাবেক উপদেষ্টাই ওসমান হাদির সন্দেহভাজন হত্যাকারীকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ তোলেন ভারতের বিরুদ্ধে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা এই দেশ থেকে শুধু আওয়ামী লীগকেই বিতাড়িত করি নাই, ভারতীয় এস্টাব্লিশমেন্টের বিরুদ্ধেও দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছি।”
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “নিষিদ্ধ পলাতক আওয়ামী লীগ এবং তাদের বন্ধুরা শহীদ ওসমান হাদিকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে”।
ওসমান হাদির হত্যাকারীদের অবিলম্বে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবার দাবি জানিয়ে আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ভারতের উদ্দেশ্যে বলেন, “না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ লড়াই থামাবে না। কঠোর থেকে কঠোরতর হবে”।
হাদির খুনীদের যে কোন মূল্যে অতি দ্রুত ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “এটা কোন সুশীল দাবি না, এটা একটিভলি কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় আমরা জানি”।
মাহফুজ আলম বলেন, “আমাদের যেমন ঘুম হারাম হয়েছে আপনাদেরও ঘুম হারাম হবে। আমাদের সবার মাথার দর নির্ধারণ হয়ে গেছে। আমাদের আর ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই”।
“যদি মৃত্যুও হয় আমাদের শত্রুদেরকে মোকাবেলা করে আমরা মরব”, বলেন মাহফুজ আলম।
‘স্যাবোটেজের’ আশঙ্কা
ওসমান হাদির মৃত্যুকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ‘ষড়যন্ত্রকারীরা স্যাবোট্যাজ’ করার মাধ্যমে নির্বাচন ভণ্ডুল করার একটা চেষ্টা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই তিন ছাত্র নেতা।
মাহফুজ আলম বলেন, “নির্বাচন ভণ্ডুল করবেন সেটা আমরা হতে দেব না।”
“এদেশে নির্বাচন হতেই হবে", বলেন মাহফুজ আলম।
“এগুলা কোন ফাঁকা বুলি না। আমরা জেনে গেছি আমাদের মৃত্যু অবধারিত। আমাদের আর পিছপা হবার সুযোগ নেই”, বলেন তিনি।
শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান
ভারতবিরোধী অনঢ় মনোভাব প্রদর্শন করলেও, তিনজনই আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশের আহ্বান জানান।
একই রকম আহ্বান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসও জানান।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ছিল, ধৈর্য্য ও সংযম বজায় রাখার এবং কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহ্বান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক”।
জনগণের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। সকলে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হবো”।
“আমাদের ক্ষোভের সুযোগে অনেকে স্যাবোটাজ করার সুযোগ নিতে পারে", বলেন নাহিদ ইসলাম।
এই আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
বিদায়ের আগে তারা বলেন তারা অন্যদের সাথে রাতে কথা বলবেন, পরবর্তী কর্মসূচি দেবার ব্যাপারে। শুক্রবার শাহবাগে নতুন কর্মসূচি থাকবে বলেও নিশ্চয়তা দেন জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা।