শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনা এখন দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু, ভোটের তফসিল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পরপরই এমন ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ।
হাদির ওপর হামলা ‘রাজনৈতিক’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, এই ঘটনার পেছনে নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতা সৃষ্টি কিংবা প্রক্রিয়াকে ভণ্ডুল করার অপচেষ্টা থাকতে পারে।
হাদির ঘটনার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনি অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা এবং উৎকণ্ঠা বেড়েছে। কিন্তু হাদিকেই কেন টার্গেট করা হলো, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অনেকেই।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে প্রকাশ্যেই গুলি করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হাদিকে। একটি বাইকের পেছনে বসা হামলাকারীর নিশানা ছিল নিখুঁত; গুলিটি হাদির মাথার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় - জীবন বাঁচাতে অস্ত্রোপচারের সময় খুলে ফেলতে হয় মাথার খুলি।
পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ হাদি।
এই হামলার আগেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামী ১২ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট।
হাদিও আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি। প্রচারণার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন।
অনিশ্চয়তা ও নানা দেনদরবারের পর সারাদেশ যখন ভোটের আমেজে ঢুকতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই টার্গেট করা হয় তরুণ রাজনীতিক হাদিকে, যে ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।
কে হাদি?
ওসমান হাদি ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামে যুবকদের একটি প্ল্যাটফর্মের নেতা ও মুখপাত্র। ঝালকাঠিতে জন্ম নেয়া তরুণ এই রাজনৈতিক নেতা পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি এবং এরপর থেকেই ইনকিলাব মঞ্চ-এর মাধ্যমে রাজনীতিতে আলোচিত হয়ে ওঠেন।
দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন ইসুতে তিনি মন্তব্য করেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ও ভারত নিয়ে ‘তীব্র সমালোচনা’ করতেন তিনি।
কেন তিনি টার্গেট?
হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তার বোন মাসুমা বেগম সাংবাদিকদের বলেছেন, “ভারত ওকে বাঁচতে দেবে না।”
যদিও মাসুমা বেগমের ওই মন্তব্য নিয়ে পুলিশ ও সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওসমান হাদি ঢাকা‑৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন। মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর নিয়ে গঠিত এই আসনটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলো এই আসনের মধ্যে পড়েছে।
কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশি‑বিদেশি ৩০টি নম্বর থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছেন হাদি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে হাদি কেন টার্গেট?
এই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া।
তিনি বলেন, “হাদি রাজনীতিতে খুবই ছোট পরিসরে, কিন্তু একটা নতুন ধারা চালু করেছেন। যেমন, তিনি ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে খরচ বহন করছেন। প্রতিদিন কত টাকা পেলেন, সেই হিসাব দিচ্ছিলেন।”
ওসমান হাদির রাজনৈতিক প্যাটার্ন, প্রতিষ্ঠিত প্যাটার্নগুলোর বাইরে একটি নতুন ধারা বলে মনে করেন শুভ কিবরিয়া।
“আবার সে এমন কোনো সংগঠিত লোক না, যার পেছনে প্রচুর লোক আছে। সুতরাং তাকে আঘাত করাটা সহজ। বড় একটা রাজনৈতিক দলের, বড় কাউকে আঘাত করাটা অনেক কঠিন।”
শুভ কিবরিয়া বলেন, “সুতরাং সে একটা পরিচিত মুখ, বিপ্লবের মুখ, অনেকের শত্রু। তাই তাকে আঘাত করার মধ্য দিয়ে আপনি একটা ঘটনা ঘটাতে পারবেন এবং সেই হিসাবে সে একটা টার্গেট।
আমার ধারণা, এই জায়গাগুলো সমাধান না হলে, এরকম আরও অনেক ঘটনা ঘটবে,” নিজের আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
রাজনৈতিক হত্যার উর্বর ভূমি
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের উর্বরভূমি হিসেবে পরিচিত। দুজন রাষ্ট্রপতি, জাতীয় ও স্থানীয়সহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতা, ছোট ও মাঝারি দলের নেতা, এমনকি সরকারে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও অতীতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
অনেকের উপর বারবার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একুশবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ দাবি করে আসছে।
শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন তখন একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে তার উপর গ্রেনেড হামলা হয়। সেই হামলা থেকে তিনি বেঁচে গেলেও বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
হাদির ওপর হামলাকে “রাজনৈতিক হত্যাচেষ্টা” হিসেবে দেখেন শুভ কিবরিয়া। “এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের চেষ্টা এবং এগুলো খুব খারাপ লক্ষণ,” বলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের সক্রিয় প্রায় সব রাজনৈতিক দলই অভিনন্দন জানান। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সব যখন প্রস্তুতি চলছে, তখনই হামলার এই ঘটনা সবাইকে হতবাক করে ফেলে।
সন্দেহভাজন হামলাকারী
জুমার নামাজের পর ব্যাটারি-চালিত রিকশায় যাচ্ছিলেন ওসমান হাদি, সঙ্গে ছিলেন তার ভাই। বাইকের পেছনে বসা এক যুবক তার মাথায় গুলি করে।
পুলিশ বলছে, হাদিকে গুলির ঘটনায় ফয়সাল করিম নামে একজনকে শনাক্ত করেছে তারা। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ছবি মিলিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে পুলিশ জানায়।
এরইমধ্যে হামলাকারীদের ধরিয়ে দেবার জন্য ৫০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রাজনৈতিক অঙ্গনে ভাবনায় পরিবর্তন
হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা কীভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনের ভাবনায় পরিবর্তন এনেছে, তাও বিশ্লেষণ করেছেন শুভ কিবরিয়া।
“দেখুন, গতকাল (শুক্রবার) আর আজকের (শনিবার) পরিবেশের মধ্যে- রাজনীতি, মনস্তত্ত্ব, মিডিয়ার অ্যাটেনশন, যে সমস্ত ভোকাবোলারি তৈরি হচ্ছে, ইনকিলাব মঞ্চ থেকে যে সমস্ত ডায়ালগ এসেছে, চিন্তা এসেছে, যে সমস্ত উৎকণ্ঠা এসেছে- এগুলো তো আমাদের অনেক কিছু পরিবর্তন করে দিতে পারে।”
তিনি বলেন, “আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের চিন্তা- আমরা কি স্বস্তির দিকে যাবো, না কি বিপদের মধ্যে যাবো? সেটা তো আমরা এখন বলতে পারছি না।
কিন্তু বড় ঘটনা এটা, অনেক বড় ঘটনা।”
হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শঙ্কা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পরই হামলা কেন?
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই ওসমান বিন হাদির ওপর হামলা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
ভোটের তফসিলের সঙ্গে এই ধরনের হামলার ঘটনার ‘যোগসূত্র’ আছে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি।
“এটা আমার কাছে মনে হয়েছে, পুরো যোগসূত্র আছে,” বলেন টুলি, যিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন।
তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পরের দিন, একটা সম্ভাব্য প্রার্থী- এইটা করার মনে কী? মানে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা।”
হাদির ওপর হামলার পর সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারকদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, “এই হামলা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার উপর সুপরিকল্পিত আঘাত। এর মাধ্যমে পরাজিত শক্তি দেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।”
এই হামলার মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“আমরা কোন অবস্থাতেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দিবো না। আঘাত যাই আসুক, যত ঝড় তুফান আসুক, কোন শক্তিই আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে পারবে না,” বলেন তিনি।
ভোট বানচাল করতে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সেই প্রসঙ্গ এনেছেন বিশ্লেষক শুভ কিবরিয়া।
“যারা বাংলাদেশকে ডিস্টাবিলাইজ করতে চায়, তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে।”
একইসঙ্গে যোগ করেন, “এটা একটা রাইট টাইম। কারণ, আপনি ইলেকশনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।”
একটি দল এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “একটি দল, গোষ্ঠী বা কিছু ব্যক্তি, দেশকে, দেশের মানুষকে, স্থিতিশীলতা বিনষ্টের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। যারা এদেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চায়, এই দেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করতে চায়, তারা তাদের ষড়যন্ত্র যে শুরু করে দিয়েছে, ওসমান হাদির ঘটনা দিয়ে তা প্রমাণিত হয়।”
বিশ্লেষক শুভ কিবরিয়া মনে করছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণ যে রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হয়েছে, তাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে ফারাক রয়েছে পুরোনো রাজনীতিবিদদের। আর এই সুযোগ নিচ্ছে ‘শত্রুরা’।
“আমি মনে করি, বয়স্ক রাজনীতিকদের সঙ্গে তরুণদের চিন্তার যে ফারাক, এই ফারাকটার মধ্যে কোনো সমন্বয় হচ্ছে না। ফলে নানা ফাঁক গলে শত্রুরা স্পেস নিচ্ছে।”
নির্বাচন ঠেকানোর পরিকল্পনা?
শুভ কিবরিয়া মনে করেন, নির্বাচন হবে কি, হবে না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় আছে। নির্বাচন হওয়া বা না হওয়ার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও অনেক কিছু।
“আপনি একটা গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন করতে পারবেন কি পারবেন না, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে- অর্থনীতি, সুস্থিরতা, শান্তি, কর্মসংস্থান।”
যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছেন, তারা এই সময়টাকেই কাজে লাগাবেন বলে মনে করেন তিনি।
“এরকম একটা ডিস্টাবিলাইজেশনের চান্স তো তাদের হাতে আছে। আমি মনে করি, এটাই রাইট টাইম। সেই রাইট টাইমকে তারা কাজে লাগিয়েছে।”
ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শঙ্কা
নির্বাচনের আগে একটা গোষ্ঠী দেশকে যদি অস্থিতিশীল করতে চায় তাহলে ‘কঠোর হস্তে’ সরকারকেই তা মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হাদির ওপর হামলার পর পুলিশ বলেছিল, প্রধান অভিযুক্তকে ধরতে ‘অলআউট’ অভিযান শুরু করেছে তারা। এরইমধ্যে যৌথবাহিনী ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট-২’ নামে একটি ধরপাকড় অভিযান শুরু করেছে।
হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতারা শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তারে সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়।
কিন্তু ঘটনার ২৮ ঘণ্টা পরও পুলিশ খুঁজে পায়নি গুলিবর্ষণকারীকে। একটি চলন্ত বাইক থেকে গুলি ছোঁড়া ওই যুবকের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তার পরিচয়ও পেয়েছে পুলিশ।
অভিযুক্তদের ধরতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন- এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম সাজ্জাত আলী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সন্ত্রাসীদের ধরতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে।”
সাজ্জাত আলী আরও বলেন, “সন্ত্রাসীদের খুঁজতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে, যেটি আমি আগেও বলেছি। দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা, র্যাবসহ সবাই কাজ করছে।”
ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকেই। গত বছরের জুলাই-অগাস্টে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের একটা অংশ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গণঅভ্যুত্থানের পর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি, যারা এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাভুক্ত ছিলেন। তারাও নতুন করে সংগঠিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয়েছে। আমাদের সকল বাহিনী তৎপর রয়েছে।”
সাবেক নির্বাচনি কর্মকর্তা জেসমিন টুলি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে আরও উন্নতি দরকার, এটা কিন্তু প্রতিনিয়ত সবাই বলে আসছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলে আসছি ইলেকশনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে।
“এইটা তো একটা অ্যালার্মিং সিচুয়েশন যে- এই রকম একটা ঘটনা তফসিল ঘোষণার পরের দিনই। এটা একটা সতর্ক হওয়ারও সুযোগ যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। আরও নিশ্চিত করতে হবে যে এ ধরনের দুর্ঘটনা বা দুঃখজনক ঘটনা যেন না ঘটে।”
নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। তারা জোর দিচ্ছেন অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে।
জেসমিন টুলি মনে করেন, নির্বাচনের আগে পরিবেশ ঠিক করতে হলে, হাদির ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
“দীর্ঘদিন পরে ধরলে (অভিযুক্তকে) তার ফল কিন্তু পাওয়া যাবে না। তাই তাৎক্ষণিকভাবে ধরে যদি বিচারের আওতায় আনা যায়, তাহলে অন্যেরা হয়ত সংযত হবে যে, 'নাহ! এখন যেনতেন করে পার পাওয়া যাবে না'।”
জেসমিন টুলি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে। আরও বেশি অভিযান চালাতে হবে। আরও বেশি অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে; বেআইনি ও অবৈধ অস্ত্র বা এইগুলো কাউকে ভাড়া করে করানো হয়েছে কিনা। যাইহোক এগুলো তো আনতে হবে।”
ভোটের আগে ‘মানুষের ও প্রার্থীদেরও নিরাপত্তা দিতে হবে’ হবে বলে জানান নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক এই সদস্য।
“আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো করার টুলসগুলো তো অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জানা আছে। তারা, আরও তৎপর হবে এটাই তো চাওয়া।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এই হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।
“লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। এটিকে আরো জোরদার ও বেগবান এবং টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে কমিটি অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট ফেইজ টু’ অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
হাদির বর্তমান অবস্থা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশনের পরই ওসমান হাদিকে নেয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। তার সার্বিক অবস্থা নিয়ে শনিবার কথা বলেছেন হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল।
“বর্তমানে ওসমান হাদির সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক,” বলেছেন ওই চিকিৎসক।
“ব্রেইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে, সেহেতু এখন কনজার্ভেটিভভাবেই ম্যানেজ করতে হবে,” বলেছেন ডা. ইকবাল, যিনি এভারকেয়ারের আইসিইউ অ্যান্ড এইচডিইউ বিভাগের কো-অর্ডিনেটর।
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ফুসফুসে ইনজুরি আছে ও চেস্ট ড্রেইন টিউবে অল্প ব্লাড আসছে। ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস যাতে ডেভেলপ না করে সেদিকে খেয়াল রেখে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
“শরীরে রক্ত জমাট বাধা ও রক্তক্ষরণ হওয়ার মধ্যে যে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিয়েছিলো (ডিআইসি) সেটা অনেকটাই ঠিক হয়ে আসছে।”