রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বিবেচনায় তাদের আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়োগের নীতিমালা জারি করেছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার “আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগ নীতিমালা ২০২৫” জারি করে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধুমাত্র রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীরা এই সুবিধা পাবেন।
রিটেইনার বলতে মূলত অস্ত্রধারী ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীকে বোঝানো হয়েছে, যা সাধারণ ভাষায় ‘গানম্যান’ নামে পরিচিত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবেদা আফসারী বলেন , “গানম্যান শব্দের বদলে রিটেইনার ব্যবহার করা হচ্ছে।” তবে কেন এই নাম ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি।
শুধু রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের জন্যই কেন এই প্রজ্ঞাপন এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ আলাপকে বলেন, “সবাইকে তো এই সুবিধা দেওয়া সম্ভব না। আমাদের কাছে এ সম্পর্কিত আবেদন অনেকেই করেছেন এবং করছেন। তা ছাড়া, আমাদের লোকবল কম। তাই রাজনৈতিক গুরুত্ব ও ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রাধান্য অনুযায়ী রিটেইনার দেওয়া হবে।”
সাধারণ মানুষ হুমকির সম্মুখীন হলে এবং নিরাপত্তার জন্য রিটেইনার চাইলে সে ক্ষেত্রে কী হবে? জিয়াউদ্দিন বলেন, “সম্ভবত পাবে না। যাদের অস্ত্র জমা নেওয়া ছিল, তারা সেগুলো ফেরত পাবেন। আর লাইসেন্সকৃত অস্ত্র না থাকলে সে অস্ত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রক্রিয়া মেনে লাইসেন্স পেলে নিজের নিরাপত্তার জন্য সে সেটা ব্যবহার করতে পারবেন।”
তবে, লাইসেন্সকৃত অস্ত্র আছে মানেই তা জনসম্মুখে দেখানো যাবে না। পাশাপাশি নিজের থানা থেকে অন্য কোনো থানার দুরত্বে গেলে তা স্থানীয় পুলিশকে জানাতে হবে বলেও জানান তিনি।
রিটেইনারের যোগ্যতা, মেয়াদ, শর্ত
প্রজ্ঞাপনে রিটেইনার এর যোগ্যতা, মেয়াদ ও শর্তের বিষয়ে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, রিটেইনারকে অবশ্যই বাংলাদেশি নাগরিক ও ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর হতে হবে। থাকতে হবে অপরাধমুক্ত ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। এ ছাড়া অবশ্যই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে তাকে। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত মেডিকেল ফিটনেস সনদ থাকতে হবে।
শুধুমাত্র সত্যিকার অর্থে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে রিটেইনার নিয়োগ অনুমোদনযোগ্য হবে। রাজনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে কিংবা ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশ্যে রিটেইনার নিয়োগ করা যাবে না।
কোন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থী যদি লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্য হলে এবং তিনি আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে অসমর্থ হলেও তিনি রিটেইনার নিয়োগ করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে বৈধ লাইসেন্সসহ আগ্নেয়াস্ত্র আছে, তা পরিচালনায় সক্ষম এবং উল্লেখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির রিটেইনার হইতে ইচ্ছুক হলে সেটা হতে পারে। তা অবশ্যই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
একজন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ এক জন রিটেইনার নিয়োগ করতে পারবেন। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর রিটেইনারের মেয়াদও শেষ হবে।
কেন এই প্রজ্ঞাপন
জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধে এই নীতিমালা জারি করা হয়েছে, বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য এই প্রাথী এবং ‘ইনকিলাব মঞ্চ’র মুখপাত্রকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা ঘটনার পরই নিরাপত্তা নিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে নানা শঙ্কা তৈরী হয়।
১১ই ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। জানানো হয় আগামী ১২ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট। তফসিল ঘোষণার পর সারাদেশ যখন ভোটের আমেজে, ঠিক তখনই টার্গেট করা হয় তরুণ রাজনীতিক হাদিকে। জুমার নামাজের পর ঢাকার পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হাদিকে। একটি বাইকের পেছনে বসা হামলাকারীর নিশানা ছিল নিখুঁত; গুলিটি হাদির মাথার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও উৎকণ্ঠার জন্ম দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় - জীবন বাঁচাতে অস্ত্রোপচারের সময় খুলে ফেলতে হয় মাথার খুলি। পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় ১৫ই ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।
সে দিনই “আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগ নীতিমালা ২০২৫” এর প্রজ্ঞাপন জারি করল সরকার।