ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যু আর তারপর সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে আবারও নির্বাচন নিয়ে সংশয় ফিরে আসছে। আর সামনে আসছে একটি প্রশ্ন, নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ?
শেখ হাসিনার পতনের পর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৬ মাসে নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথা নানা মহলেই শোনা যাচ্ছিল। নিশ্চয়তার দিকে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল তফসিল ঘোষণার মধ্যে দিয়ে।
পরদিনই ভোটের প্রচারণায় গিয়ে ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হবার পর আবারও আশঙ্কা আর তা সংশয়ে রূপ নেয় বৃহস্পতিবার রাতে যখন ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের সময় চলে ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগ।
বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির মারা যাওয়ার খবর আসার পর বহু মানুষ মিছিলযোগে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়েছিলেন।
মধ্যরাতে সদ্য পদত্যাগ করা দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এবং এনসিপি’র আহবায়ক ও আরেক সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম শাহবাগে আসেন আন্দোলনে সংহতি জানানোর জন্য।
বিক্ষোভকারীদের প্রতি তাদের বার্তা ছিল শান্তিপূর্ণ থাকার জন্য। তাদের আশঙ্কা - সুযোগ কাজে লাগিয়ে ‘ষড়যন্ত্রকারীরা স্যাবোট্যাজ’ করার মাধ্যমে নির্বাচন ভণ্ডুল করার একটা চেষ্টা চালাতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন ভণ্ডুল হলে কার লাভ?
রাজনীতিক এবং পর্যবেক্ষকরা বলছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দীর্ঘায়িত হলে দেশের ভেতরে ও বাইরে যাদের সবচেয়ে লাভ হবে নির্বাচন বানচাল করতে সচেষ্ট তারাই।
গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফিরোজ আহমেদের মতে, “প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রে এই মুহূর্তে যারা সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখছে, অস্থিতিশীলতার পেছনে তারা থাকতে পারে”।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আরও বাড়লে তারা সব কিছু নিজেদের মত করে গুছিয়ে নিতে পারবে যাতে নির্বাচনে তারাই জিতে আসে,” আলাপ-কে বলেন তিনি।
সদ্য পদত্যাগ করা উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এই অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী করেছেন ‘উগ্র ডানপন্থি’ গোষ্ঠীকে। সেই সম্ভাবনার কথা বলেছেন ফিরোজ আহমেদও। তার মতে এই গোষ্ঠীর মধ্যে ‘প্রতিশোধ নেওয়ার স্পৃহা’ কাজ করছে।
“এরা গণমাধ্যমকে ভয় পায়, আমাদের সংস্কৃতিকে ভয় পায়। তাই এসব জায়গায় হামলা চালায়,” বলেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারশনের সাবেক সভাপতি।
বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সামনে উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে দেখালে যাদের লাভ তারাও এর পেছনে থাকেতে পারে বলে মনে করেন ফিরোজ আহমেদ।
“এই দেশ থেকে টাকা পাচার করে যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদের সুবিধা হয় বাংলাদেশ উগ্রবাদী দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রচার পেলে,” আলাপ-কে বলেন তিনি।
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আরশাদ মাহমুদ এই অস্থিতিশীলতার পেছনে দেশের রাজনীতির সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার যোগসূত্র দেখছেন।
বিএনপি জনসমর্থন কমে এসেছে এই ষোল মাসে আর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে সেটি পালটে যাবে বলে মনে করেন আরশাদ মাহমুদ।
“তিনি ফিরে আসলে তা বিএনপি’কে একটা মোরাল বুস্টও দেবে,“ আলাপ-কে বলেন তিনি।
বিএনপি’র জনসমর্থন বেড়ে গেলে যাদের সবচেয়ে বেশি অসুবিধা এই অস্থিতিশীলতার পেছনে তাদের থাকার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন এই সিনিয়র সাংবাদিক, যিনি একসময় কাজ করেছেন গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের মত নামজাদা বিদেশি গণমাধ্যমে।
নির্বাচন না হলে অনেকেরই লাভ বলে মনে করেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া।
“বিগত ২৫ যারা ব্যবসা করেছে। যারা বিভিন্ন দায়মুক্তির আইন বানিয়ে, একেবারে আইনের সাহায্যে কোনরকম প্রতিযোগিতাহীনভাবে ব্যবসা করেছে তাদের জন্য লস,“ আলাপ-কে বলেন তিনি।
ফ্যাসিবাদ, গণহত্যা আর গুমের মতো অপরাধের বিচার চলছে আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে আরও নানা দুর্নীতি ও অপরাধের বিচার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে মনে করেন শুভ কিবরিয়া।
“সুতরাং বিচার হলে যাদের ক্ষতি হবে, তারা চায় না। (নির্বাচন) না চাওয়ার গ্রুপ কিন্তু খুবই স্ট্রং,” তিনি বলেন।
নির্বাচন পেছালে বা না হলে লাভ হবে অনেকেরই, কিন্তু ক্ষতিটা হবে বাংলাদেশের, বলেন শুভ কিবরিয়া।